রাতারাতি ব্যাপক রদবদল ঘটেছে বিএনপিতে; নয়টি কমিটি বিলুপ্ত এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি। দলের নেতারা কমিটি পুনর্বিন্যাসকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখলেও অনেকের মতে এটি সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থতার পেছনে নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাই মূল কারণ। তবে এ রদবদল যোগ্যদের মূল্যায়নের পাশাপাশি আগামী আন্দোলন-কর্মসূচিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের।
ক্ষমতা ছাড়ার পর চারটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে পরাজয়, আর বাকি দুটিতে অংশ না নেয়ায় ব্যাকফুটে থাকা বিএনপি প্রতিবারই চেষ্টা করেছে ঘুরে দাঁড়াবার। সরকার হটানোর আন্দোলনে ছন্দপতন ঘটায় দলটি কৌশলে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জোটগত কিংবা যুগপৎভাবে আন্দোলন করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফলতা আসেনি বিএনপির ঘরে।
প্রতিবারই আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ খুঁজেছে দলের হাইকমান্ড। নেতাদের অবস্থান বদল করেও যেনো কিছুতেই কিছু হয়নি দলটির!
গেলো বছরের ২৮ অক্টোবরের পর ছন্দ হারানো বিএনপি চলতি বছরের ১৩ জুন একরাতে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি মহানগরসহ ৯টি কমিটি ভেঙে দেয়। এছাড়া পরিবর্তন আনা হয় ছাত্র ও যুব সংগঠনের মধ্যেও। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তের সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করা হয় ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি। ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাহী কমিটিসহ মিডিয়া সেল এবং কৃষক দলেও আনা হয় ব্যাপক রদবদল।
কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত বলা হলেও মূলত সঠিক সময়ে ভূমিকা রাখতে না পারা, আর নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা ক্ষুব্ধ করেছে হাইকমান্ডকে — এমন দাবিও করছেন বিএনপি নেতারা। হাইকমান্ড মনে করে, এ কারণেই গত আন্দোলনে সফলতার ফসল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। যদিও নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল হচ্ছে না। দলের অনেক পোস্ট ফাঁকা আছে। আমি নিজে একজন পদধারী নেতা। আমি পদ ধরে রেখেছি; কিন্তু কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছি না। সেটা আমার বয়সের কারণে বা অসুস্থতার কারণে। সব কিছু বিবেচনা করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
ব্যর্থতার দায়ে নয়; বরং নতুন করে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই দলের মধ্যে এ পরিবর্তন বলে মত দেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, ‘কর্মসূচিগুলো যারা ভালোভাবে পালন করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আর যারা ভূমিকা রাখতে পারেননি তাদের সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে — এটাই তো রাজনৈতিক দলের কাজ। একটি দলতো হাওয়ায় চলে না, তাকে সবকিছু দেখতে হয়। একটা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সেখানে নতুন কাউকে আনতে হয়, এটাই তো নিয়ম।’
ঈদের মাত্র দুদিন আগে এমন রদবদলে দলের ভেতরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, পরবর্তী আন্দোলনে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করবে নতুন নেতৃত্ব।