অব্যবস্থাপনা নিয়েই আরেকটি কোরবানির ঈদ পার হবে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর। পরিবেশ দূষণে একদিকে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ, অন্যদিকে ধ্বংসের পথে ধলেশ্বরী নদী। তবে এর দায় নিতে রাজি নন ট্যানারি মালিকরা।
বৈশ্বিক বাজারের কথা মাথায় রেখে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে ২০০ একর জমি নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের গড়ে ওঠে চামড়া শিল্পনগরী। আসছে কোরবানিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রস্তুত ১৪২টি ট্যানারি।
তবে ট্যানারি পল্লীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) অকেজো। এর মাধ্যমে যথাযথভাবে বর্জ্যমিশ্রিত পানি পরিশোধন হয় না। এছাড়া রাস্তায় রয়েছে ময়লা পানি; পুরোপুরি ঠিক নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষসহ শ্রমিকরা।
ফারুক হোসেন নামে স্থানীয় একজন জানান, বৃষ্টি নামলে পানি ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে যাওয়ার কথা। তবে এই ড্রেনই বন্ধ হয়ে আছে ট্যানারির বর্জ্যে। তাহলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হওয়ার জায়গা কোথায়? এই ড্রেনের ময়লাসহ পুরো পানি বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা জমাট করে ফেলে। তাছাড়া এগুলো নদীর পানিকেও প্রতিনিয়ত দূষণ করে চলে এসেছে।
আসছে কোরবানি ঈদে আবারও পুরোদমে চলবে এসব কারখানা, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রাশেদ নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে এই বর্জ্য মিশ্রিত পানি শরীরে স্পর্শ করলে, চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে। তাছাড়া এই ট্যানারিগুলোর জন্য পুরো এলাকাজুড়ে বিশ্রি গন্ধ এবং দূষিত বাতাসের কারণে আশপাশে চলাও কষ্ট হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, পরিবেশবান্ধব না হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে প্রবেশেধিকার হারাচ্ছে দেশের এই চামড়া শিল্প। এখন সময় এসেছে সরকারের এই খাতে নজর দেয়ার।
পরিবেশ নষ্ট হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একা দায়ী নয় বলে দাবি বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনটি বলছে, বারবার ঠিক করার আবেদন জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেই বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ট্যানারি এখন প্রস্তুত লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়ার জন্য। তবে এই সিইটিপির জন্য এই সনদ পাওয়া হচ্ছে না। যদি একটা কেন্দ্রীয়ভাবে সিইটিপি করে দেয়া যেত, তাহলে এই সমস্যাগুলো হতো না।
এদিকে বিসিকের অফিসে কয়েকবার এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য যাওয়া হলেও খোঁজ মেলেনি কারো।