কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা প্রতিনিধি॥
তথ্য অধিকার আইনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য চেয়ে ভোলা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের কাছে আবেদন করেছিলেন তজুমদ্দিন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাদির হোসেন রাহিম।
গত ৫ জুন ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে তিনি আবেদনটি করেন। পরবর্তীতে নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসিয়াল ই-মেইল থেকে সেই আবেদনের একটি জবাব দেয়া হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীল স্বাক্ষরিত জবাবের চিঠিতে তথ্য পাওয়ার জন্য সাংবাদিক সাদির হোসেন রাহিমকে ৩০ হাজার টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তথ্য প্রাপ্তির আবেদনকারী সাদির হোসেন রাহিম তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী ৯ ধরনের তথ্য চেয়েছিলেন। ওই সব তথ্যের অনুলিপি পেতে ওই টাকা জমা দেয়ার কথা নয়।
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ৮ ধারার (৪) উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরোধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ওই তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
তথ্য অধিকার আইনের বিধি-৮-এ বলা হয়, লিখিত কোনো ডকুমেন্টের কপি সরবরাহের জন্য (ম্যাপ, নকশা, ছবি, কম্পিউটার প্রিন্টসহ) এ-৪ ও এ-৩ মাপের কাগজের ক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠা দুই টাকা হারে ও তদুর্ধ্ব সাইজের কাগজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি বা তথ্যের মূল্য পরিশোধযোগ্য হবে।
সাদির হোসেন রাহিমকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনার ই-মেইল যোগে প্রেরিত আবেদনটি অত্র দপ্তরে পাওয়া গিয়েছে। তথ্য অধিকার আইনে বিধি-৮(৪) উপ-ধারা (১) এর বিধান মোতাবেক তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি এবং চাহিত তথ্যের ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২, ২০২২- ২০২৩ এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বিভিন্ন কাগজপত্রের ফটোকপিসহ অন্যান্য সম্ভাব্য খরচ বাবদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকার পে-অর্ডার নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, ভোলা বরাবরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পে-অর্ডার প্রাপ্তি সাপেক্ষে তথ্য প্রাপ্তির কার্যক্রম শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য যে, তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি ও ফটোকপি ও অন্যান্য খরচ পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। আরও উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সময় সাপেক্ষে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আপনার বরাবরে প্রেরণ করা হবে।
এ বিষয়ে সাদির হোসেন রাহিম বলেন, চিঠি পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে কিভাবে এমন একটি অনিয়মতান্ত্রিক চিঠি আমাকে পাঠালেন, যে চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি কত পিছ কাগজের বিপরিতে তিনি এই মূল্য নির্ধারণ করেছেন। আমি মনে করি উনি তথ্য প্রদানে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই মূল্য নির্ধারণ করে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকত সৃষ্টি করেছেন যা তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী শাস্তি যোগ্য অপরাধ। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি যে নিয়ম রয়েছে তা তিনি সম্পূণরুপে ফলো করেননি। আমার চাহিত তথ্যের মূল্য কোনভাবেই এত টাকা হতে পারেনা। আমি এ বিষয়ে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করবো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিকরা তথ্য চাইবেন সরকারি কর্মকর্তারা তথ্য আইন অনুযায়ী তথ্য প্রদান করবেন। শুধু সাংবাদিক নয় সকল নাগরিক তথ্য অধিকার আইনে যে কোন তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখেন। আর সেই তথ্য কিনে নিতে হবে, কেনো? তিনি তথ্য দিতে বাধ্য। সাংবাদিকের কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়টি বেমানান বলে দাবি করেছে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা সংগঠন বিএমএসএফ। তিনি তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকের কাছে এ ধরনের চিঠি পাঠানো দুর্নীতির পরিচয় রেখে গেলেন।
এ ঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম খলীল জানান, তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফি, ফটোকপি ও অন্যান্য খরচ বাবদ যে টাকা চাওয়া হয়েছে তা যদি কম বেশি হয় পরবর্তীতে তা সমন্বয় করা হবে। পে অর্ডার জমা হলে আমরা তথ্য প্রদানের কাজ শুরু করবো।