আসন্ন কোরবানির ঈদে চট্টগ্রামে চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও প্রকৃত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে ব্যবসায়ীরা। আবার ঢাকার ট্যানারিগুলোর কাছে গত তিন বছরে বকেয়া পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিজেদের পুঁজিতে চামড়া কিনতে হয়। এতে বছরের পর বছর ধরে বিপাকে পড়ে আছেন তারা।
দেশে কাঁচা চামড়া সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের আড়তদারদের মাধ্যমে তিন লাখ পিসের বেশি চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানো হয়। এর বাইরে গাউছিয়া কমিটিসহ অন্যান্য হাত ঘুরে রাজধানীতে যায় আরো কয়েক লাখ পিস চামড়া।
এসব চামড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধে তারা গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি মালিকরা যথাসময়ে চামড়ার দাম পরিশোধ করলে এবং সরকার স্বল্পসুদে ঋণ বা প্রণোদনা দিলে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
শুধু যে ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া আছে তা নয়, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী রহস্যজনক কারণে পান না ব্যাংকঋণ। তাই নিজেদের পুঁজিতেই এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনে সংরক্ষণ করতে হয়।
এদিকে, চলতি বছর কোরবানির ঈদে ঢাকার বাইরে প্রতি পিস লবণযুক্ত চামড়ার দাম এক হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কারসাজিতে এ দর পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ট্যানারি মালিকরা কখনোই সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এমনিতেই প্রতি পিস চামড়া সংরক্ষণে খরচ পড়ে ৫০০ টাকার বেশি। এর মধ্যে লবণের খরচই পড়ছে কমপক্ষে দেড়শ টাকা। চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামে চামড়া নেন না। তারওপর রয়েছে চামড়া সংরক্ষণের খরচ। সব মিলিয়ে লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বর্তমানে কোনো ট্যানারি না থাকায় সংগৃহীত পশুর চামড়া ১৫ দিন পর্যন্ত মুরাদপুর ও আতুরার ডিপো এলাকার আড়াইশ আড়তে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকায়।