দুই যুগ ধরে সংসার করছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শান্ত মিয়া (৫০)। পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর কামড়ে কান হারালেন তিনি। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কানের বিচ্ছিন্ন অংশ আর স্থাপন করতে পারেননি চিকিৎসকরা। পরে ফিরিয়ে এনে নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে জানাজানি হয়েছে শনিবার (৮ জুন) রাতে।
কান হারানো মো. শান্ত মিয়া মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরের বাসিন্দা। তার স্ত্রী রাহেলা বেগম পাশাপাশি এলাকার।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শান্ত মিয়া ও রাহেলার প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নানা বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে রাহেলা ক্ষিপ্ত হয়ে শান্ত মিয়ার কানে জোরে কামড় দেয়। এতে শান্তর কান প্রায় পুরোটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত শান্ত মিয়াকে মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মমেক হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। এ সময় বিচ্ছিন্ন কানের অংশটুকুও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মমেকের চিকিৎসকরা চেষ্টা করে কানের অংশ স্থাপন করতে পারেননি।
চিকিৎসা শেষে শুক্রবার তাকে ফের মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি সবার মধ্যে জানাজানি হয়।
ভুক্তভোগী শান্ত মিয়া বলেন, ‘আমার কান পুরোটা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। ময়মনসিংহ গিয়েও লাগানো যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের সংসার জীবন ঝগড়া করেই কাটলো। কিছুদিন আগে বড় ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি তাই তার ভালমন্দ জানার অধিকার আমার আছে। এসব জিজ্ঞাসা করতে গেলে আমার স্ত্রী আর ছেলে মিলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায়।’
তবে এ নিয়ে থানায় কেন অভিযোগ কেন করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে সুস্থ হয়ে নিই। পরে যা যা করা দরকার সব করব।’
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পার্থ সরকার জানান, শান্ত মিয়ার কানের সিংহভাগই কামড়ে আলাদা করে ফেলেছে। শুধু নিচের কিছু অংশ রয়েছে। এটা একটা অঙ্গহানির ঘটনা। মমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু সেখানেও কানের কাটা অংশটুকু স্থাপন করা যায়নি। এখন আর কিছু করার নেই। তার সুস্থ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কামাল হোসেন রতন বলেন, ‘শান্ত মিয়ার কান বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি জেনেছি। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। বর্তমানে রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ রয়েছি।’
শান্ত মিয়ার ছেলে মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা-মা প্রায় সময়ই ঝগড়া করে। তাদের ঝগড়া দেখতে আর ভালো লাগে না। সে জন্য আমি নানার বাড়ি থাকি। বিষয়টা যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর তাই পারিবারিকভাবেই সমাধান হয়ে যাবে।’
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’