টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। রোববার (৯ জুন) বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। একইসঙ্গে প্রায় ৩০ জন মন্ত্রীরও শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দিল্লিতে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন মোদি এবং সরকার গঠনের আবেদন জানান। বিজেপি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির কাছে এনডিএর মোট ২১ জন নেতার সমর্থনপত্র নিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন।
শনিবার (৮ জুন) মন্ত্রিসভার পদ বণ্টনে এনডিএর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জোটের শরিক হিসেবে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ৪টি মন্ত্রণালয় পাবে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। আর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) ২টি মন্ত্রণালয় পাবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন মতে, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো ঘিরে মানুষের কৌতূহল বাড়ছে; যার সবকটিই বিজেপি নিজের দখলে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, সড়ক পরিবহন, রেলওয়ে, আইটি ও শিক্ষা।
ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা সত্ত্বেও জোটের শীর্ষ শরিকদের বড় কিছু দাবি পূরণ না-ও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডি(ইউ) রেলওয়ে মন্ত্রণালয় দাবি করেছে এবং এই দাবি থেকে মোটেও সরছে না।
তবে পাবে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আরও জল্পনা ছিল, টিডিপি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নিতে আগ্রহী। তবে বিজেপি এটাও ধরে রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন মতে, এনডিএর গুরুত্বপূর্ণ এই দুই মিত্র (টিডিপি ও জেডিইউ) বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ ক্যাটাগরির মর্যাদা দাবি করেছে এবং অর্থনৈতিক প্যাকেজের জন্য তীব্র দরকষাকষি চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি শনিবার (৮ জুন) বলেছেন, মন্ত্রণালয় বণ্টনের ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতে, কতজন মন্ত্রী শপথ নেবেন সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে কমপক্ষে ৩০ সদস্যের শক্তিশালী মন্ত্রিসভা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দিল্লিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, মোদির শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরেও থাকছে একই রকম ব্যবস্থা।
মোদির শপথ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থল ও আশেপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫টি আধাসামরিক সংস্থা, এনএসজি কমান্ডো এবং ড্রোন মোতায়েন থাকবে। রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছাকাছি বিশাল এলাকা ‘নো ফ্লাই জোন’-এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। শুধু বিমান নয়, ফানুস বা ড্রোনও ওই এলাকায় ওড়ানো বা চালানো যাবে না।
এ সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যে পথে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করবেন, সেই পথে স্নাইপার ও সশস্ত্র কর্মীরা থাকবেন সতর্ক অবস্থায়। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে কৌশলগত অবস্থানগুলোর ওপর নজরদারি করা হবে নিখুঁতভাবে।
এআই প্রযুক্তি এবং ‘ফেসিয়াল রিকগনিশনের’ মতো উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি স্নাইপাররাও সতর্ক অবস্থায় থাকবেন পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে।
রাষ্ট্রপতি ভবনের চারপাশে কৌশলগতভাবে অবস্থান নেবে সোয়াট টিম এবং এনএসজি কমান্ডোসহ প্রায় আড়াইহাজার পুলিশ। এ উপলক্ষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিতদের মধ্যে থাকবেন শ্রমিক, রেলকর্মী, ট্রান্সজেন্ডার এবং সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে ভারতের প্রতিবেশী ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, সেশেলস, মরিশাস, নেপাল, এবং ভুটানের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন।
পাশাপাশি একই দিন সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত নেতারা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মু আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তাদের হোটেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়া এবং ফিরে আসার জন্য নির্ধারিত রুট থাকবে। সেসব রুটে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দিল্লিতে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য আশপাশের বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীদের ট্র্যাফিক পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত থাকা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।