শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বগুড়ার শেরপুরের উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনে নেই বিএনপির দলীয় অংশগ্রহণ ও নেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। তবু নিজেকে সরকারি দলের অনুগত্যের প্রমাণ দিতে যেন প্রার্থীরা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের অভ্যন্তরীণ স্নায়ু যুদ্ধ এখন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নিচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সবার দৃষ্টি চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ জামাল সিরাজী ও সুলতান মাহমুদের দিকে। তাদের প্রচরণায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিং সামনে আসতে শুরু করেছে।
অতীতে শেরপুরের রাজনীতিতে সাবেক এমপি হাবিবর রহমান ও বর্তমান এমপি মজিবর রহমান মজনুর দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছিলো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল তা সংঘর্ষের রূপ নিয়ে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তৎকালীন এমপি হাবিবর রহমানের গ্রুপের প্রধান শক্তি ছিলো তারিকুল ইসলাম তারেকের নেতৃত্বে উপজেলা যুবলীগ, আর মজিবর রহমান মজনুর গ্রুপের উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে মজিবর রহমান মজনু এমপি নির্বাচিত হওয়ায় বাহ্যিকভাবে গ্রুপিংয়ের অবসান হলেও উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আবারও সামনে আসছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সকলেই তাকে বর্তমান এমপি মজিবর রহমান মজনুর কাছের মানুষ হিসেবে জানেন। দলীয় প্রার্থী না হলেও দলীয় পদের কারণে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন। উপজেলা ও পৌর কমিটি তাকে সমর্থন দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা কর্মী। তারা মনে করেন যেহেতু সুলতান মাহমুদ দলের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপির কাছের মানুষ, তার পক্ষে কাজ না করে উপায় নেই।
অন্যদিকে আরেক প্রার্থী শাহ জামাল সিরাজী বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অর্ধ শতাব্দী ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও এখন তিনি কোন ঠাসা। দলের সুবিধা বঞ্চিত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার। গত ২৪ তারিখে এক কর্মী সভায় উপজেলা যুবলীগ তার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাকে কেন্দ্র করে সাবেক এমপির গ্রুপ টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে তাকে পরাজিত করে বর্তমান এমপির গ্রুপ নিরংকুশ আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছেন বলে জনসাধারণের অভিমত।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ জামাল সিরাজী বলেন, আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে এককভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু সুলতান মাহমুদ এখনো বিভিন্ন স্থানে দলের বর্ধিত সভার নামে আমার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি এমন প্রচার করছেন যেন তিনি আওয়ামী লীগ, আর আমি আওয়ামী বিরোধী। আমার পোষ্টার ব্যানার খুলে ফেলা হচ্ছে। তাদের আচরণে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আশংকা দেখা দিয়েছে।
তবে নির্বাচনী প্রচারণায় দলীয় শক্তি প্রদর্শনের কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন,”আমি প্রার্থী হওয়ার আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর মতামত নিয়েছি। তারা আমার পক্ষে কাজ করছেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জনগণের মাঝে গুজব ছড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।”