উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।।
নড়াইলে চাঞ্জল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন, আসামি গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান। নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানাধীন মুচড়া বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমামতি করেন। মাঝে মধ্যে তিনি তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল সদর থানাধীন গোবরা গ্রামে আসা-যাওয়া করতেন। তার স্ত্রী মোছাঃ ইতি বেগম (৪২) গ্রামের বাড়িতে একা থাকতেন।
আনুমানিক ১০ মাস পূর্বে মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি নামের এক ব্যক্তি একচালা টিনশেড পাটকাঠির বেড়াযুক্ত একটি ছাপড়া ঘর মাসিক পাঁচশত টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেন। গত ২০/০৪/২০২৪ অনুমান ২০.৩০ মিনিটের সময় ইমামের ভাগ্নে মোঃ ফেরদৌস মোল্যা (১৮) তাকে ফোন করে বলে তার স্ত্রী মোছাঃ ইতি বেগম (৪২) কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং তাদের ভাড়াটিয়া মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি এর ঘরে তালা লাগানো ।
গত ২১/০৪/২০২৪ সন্ধ্যা অনুমান ১৮.০০ সময় ইমামের আত্মীয় মোঃ জুয়েল বিশ্বাস তার বাড়িতে একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানায়। তখন ইমাম মোঃ শফিকুল ইসলাম তার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে তার বাড়িতে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ভাড়াটিয়া মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি এর ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং চৌকির নিচে বস্তা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় তার স্ত্রী মোছাঃ ইতি বেগম (৪২) এর গলাকাটা লাশ ও পাশে একটি কাঁচি দেখতে পান। চৌকির উপর বিছানার চাদর, কাঁথা ও কাঁপড়ে রক্ত মাখা অবস্থায় দেখতে পান।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী মোঃ শফিকুল ইসলাম নড়াইল সদর থানায় মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি(৪৮) সহ অজ্ঞাতনামা ১/২ জন’কে আসামি করে এজাহার দায়ের করলে নড়াইল সদর থানার মামলা নং-২১, তারিখ- ২২/০৪/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
মামলা রুজু হওয়ার পর নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার মোহাঃ মেহেদী হাসান’র নির্দেশে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) এসএম রেজাউল করিমসহ একাধিক টিম আসামি গ্রেফতার ও মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জনাব তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) এর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে নড়াইল সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সাজেদুল ইসলাম, এসআই(নিরস্ত্র) মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই (নিরস্ত্র) মোঃ সাইফুল ইসলামসহ গঠিত একটি চৌকস টিম গতকাল ২৭/০৫/২০২৪ রাত অনুমান ২২.০০ সময় অভিযান পরিচালনা করে আসামি জিয়াউর রহমান (৪২), পিতা-মৃত নেছার বিশ্বাস, সাং-গোবরা, থানা-নড়াইল সদর, জেলা- নড়াইলকে নিজ বাড়ি গোবরা হতে গ্রেফতার করেন।
আসামি জিয়াউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, পলাতক আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ভিকটিম ইতি বেগমের নিকট হতে আনুমানিক পাঁচ মাস পূর্বে বিশ হাজার টাকা এবং তিন মাস পূর্বে ত্রিশ হাজার টাকা ইট কিনে দেওয়ার কথা বলে নেয়। কিন্তু মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ইট কিনে না দিয়ে তাকে ঘোরাতে থাকে। ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগম (৪২) পরবর্তীতে জমি ক্রয়ের জন্য ব্রাক ব্যাংক হতে দুই লক্ষ টাকা লোন করে যা আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ও জিয়াউর রহমান জানতে পারে।
আসামিদ্বয় ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমের উক্ত লোনের টাকা আত্মসাত করতে গোবরা কাকুর মোড়ে হাফিজ মিয়ার চায়ের দোকানে বসে পরিকল্পনা করে। ঐ সময় তারা স্পিড, চানাচুর, চকলেট, কেক ও ঘুমের ঔষুধ ক্রয় করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি একটি স্পিডের বোতলে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে রাখে এবং রাত অনুমান ২২.০০ সময় আসামি জিয়াউর রহমানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে তার ঘরে একত্রিত হয়। এর কিছুক্ষণ পর মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমকে ডেকে চানাচুর, চকলেট ও কেক খাওয়ানোর এক পর্যায়ে কৌশলে ঘুমের ঔষুধ মিশ্রিত স্পিড খাওয়ায়। এরপর আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি প্রথমে তার ঘরের ফ্লোরের মাঝে ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমকে ধর্ষণ করে এবং পরে আসামি জিয়াউর রহমান তাকে ধর্ষণ করে। ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমকে ঘুমের ঔষুধ সেবন করানোর কারণে অচেতন হয়ে পরে। তখন রাত অনুমান ২.০০ টার সময় আসামি জিয়াউর কাঠের চৌকি উঁচু করে ধরে আর আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমকে টেনে চৌকির নিচে নেয়।
এরপর আসামি জিয়াউর ইতি বেগমের দুই পা চেপে ধরে রাখে আর আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি তার ঘরে থাকা ধারালো কাঁচি দিয়ে ইতি বেগমের বুকের উপর বসে গলা কেটে হত্যা করে। রক্ত যাতে ঘরের বাইরে না যায় সেজন্য তারা ঘরের ভিতর থাকা কাঁথা, কম্বল ও কাপড় দিয়ে রক্ত মুছে ঘরের মধ্যে রাখে। এরপর ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমের কাছে থাকা তার ঘরের চাবি নিয়ে আসামিদ্বয় ঘরের তালা খুলে তার ঘরে ঢুকে। ভিকটিম মোছাঃ ইতি বেগমের ঘরের মধ্যে থাকা শোকেজ ও অন্যান্য জায়গায় টাকা ও স্বর্ণালংকার খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু কোন টাকা খুঁজে পায় না। পরে জিয়াউর রহমান তার বাসায় যায়। মোঃ মনিরুল ইসলাম@মনি ইতি বেগমের ঘরের মধ্যে থাকে এবং ভোর বেলা ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
ধৃত আসামি জিয়াউর রহমাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পালাতক আসামি মোঃ মনিরুল ইসলাম মনিকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।