ভূখণ্ড ছাড়িয়ে মহাকাশেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার উত্তেজনা বাড়ছে। প্রযুক্তিগত এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বেশ এগিয়ে। দেশটিকে টেক্কা দিতে মহাকাশযান ভিত্তিক বিভিন্ন অভিযান চালাচ্ছে চীন-রাশিয়া। মস্কোর বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ধ্বংসের অভিযোগও করেছে ওয়োশিংটন। যদিও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেস প্রতিযোগিতায় বেশ এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিকে টেক্কা দিতে বিভিন্ন মহাকাশযানভিত্তিক অভিযান চালাচ্ছে চীন ও রাশিয়া।
২০২৩ সালের ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টস-ইউসিএস- এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সাড়ে সাত হাজারের বেশি অপারেশনাল স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন মালিকানাধীন, যার বেশিরভাগই বাণিজ্যিক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে চীন। সম্প্রতি, দেশটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাড়িয়েছে।
ইউসিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের স্যাটেলাইট রয়েছে ৬২৮টি। বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে বলে জানায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। মহাকাশে বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট তৎপরতাকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি, মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে রাশিয়া স্যাটেলাইট ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে, এমন ভয়ংকর দাবি করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। যদিও মস্কো তা অস্বীকার করেছে। এর আগে, চীন-রাশিয়া স্থলভিত্তিক উচ্চক্ষমতার লেজার, অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্র পরীক্ষা ও মোতায়েন করছে বলেও দাবি করে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রই মহাকাশে অস্ত্র মোতায়েনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে রাশিয়া। এতে, ভূখণ্ড ছাড়িয়ে মহাকাশেও যুদ্ধের শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৫৭ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম স্যাটেলাইট পাঠায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিহাসের প্রথম মহাকাশ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। চলতি শতাব্দীতে এসে সে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
গত দুই দশকে চীন নতুন বিশ্বশক্তি হিসেবে উদয় হওয়ার পর মহাকাশ প্রতিযোগিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভারতও এ প্রযুক্তিতে বেশ এগিয়ে গেছে। তবে মূল প্রতিযোগিতাটা চলছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে। ২০০৭ সালে ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালায় চীন। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম ভূমি থেকে স্যাটেলাইট ধ্বংসের সফল মিশন। পরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতও ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে নিজেদের স্যাটেলাইট ভূপাতিত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাওয়ায়, নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনে মহাকাশের দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব শক্তিগুলো। তবে কেবল সামরিক আধিপত্য ও নজরদারিই নয়, এর পেছনে ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। মহাকাশে বিভিন্ন উপগ্রহের মাধ্যমে চলছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস সিস্টেমের মত গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা।