বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এমপি আনারকে হত্যার পর ছিন্নভিন্ন দেহ তিনটি ট্রলিব্যাগে করে ফ্ল্যাট থেকে নিয়ে যান হত্যাকারীরা।
বুধবার (২২ মে) রাতে মামলার তদন্তকারী কলকাতার সিআইডি সূত্র সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সিআইডি জানিয়েছে, গত ১৩ মে এমপি আনার দুটো অ্যাপ-ক্যাব বদল করে নিউটাউনের সাঞ্জিভা গার্ডেন্স আবাসনে ৫৬-বিইউ ফ্ল্যাটে ঢোকেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন পুরুষ।
পরদিন ১৪ তারিখ সকাল ১০টা ২ মিনিটে ওই ফ্ল্যাট থেকে দুজন ব্যক্তি দুটো ট্রলিব্যাগ নিয়ে বের হন। এরপর প্রায় কয়েক ঘণ্টা পর দুপুর ২টায় আরেকজন আরও একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যান।
১২ মে থেকে ২২ তারিখ গভীর রাত পর্যন্ত ওই আবাসনের গুরুত্বপূর্ণ সব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, ওই সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের এমপিকে হত্যা করা হয়। এবং হত্যা করে তার দেহ ছিন্নভিন্ন করে ট্রলিব্যাগে করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ইন্টেলিজেন্স ব্যুারো বা আইবি সূত্র থেকে সবশেষ তথ্য বলছে, হত্যাকারীদের সন্ধানে ৬টি টিম কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই দেহ উদ্ধারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে।
আনার হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি দায়িত্ব নিয়েছে। এরই মধ্যে বরাহনগর থানার মিসিং ডায়েরিকে এফআইআর হিসাবে ধরে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশও। সঙ্গে রয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাক্সফোর্স বা এসটিএফ।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র বলছে, ১৩ তারিখ এমপি ৫৬-বিইউ ফ্ল্যাটে ঢুকে যাওয়ার পরই তিনজন সেখানে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে একজন মধ্যবয়স্ক নারীও ছিলেন। তারা সেখানে কয়েক ঘণ্টা থাকার পর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যান। তবে এমপি আনারকে আর ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেখা যায়নি সিসিটিভির ফুটেজে।
সূত্রগুলোর একটি বড় অংশ মনে করছেন, যারা এই হত্যায় জড়িত তাদের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল আনারের। এবং এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি এমপির পরিচিতরাই কেউ করেছেন বলেও গোয়েন্দারা ধারণা করছেন।
এদিকে ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনে যে বাড়িতে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে উঠেছিলেন, সেই বাড়ির মালিক স্বর্ণ ব্যবাসায়ী গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করছে। সূত্র বলছে, মামলার তদন্তের স্বার্থে গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভারতের চলমান জাতীয় নির্বাচনের সময়ে এ ধরনের একটি হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্বের চোখে দেখছে দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে কূটনৈতিক মহল। দেশটির পররাষ্ট্র ও খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলার গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও সময় সংবাদকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
গত ১২ মে বাংলাদেশের দর্শনা ও ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন ঝিনাইদাহ-৪ আসনের (কালীগঞ্জ ) এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। বরাহনগরে পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে এক রাত থেকে ১৩ মে দুপুরে একটি গাড়িতে চড়ে বেড়িয়ে যান আনার।
এরপর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় সবার। ১৮ মে বরাহনগর থানায় মিসিং ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস। আর এর ৫ দিন পর ২৩ মে বুধবার জানা গেলো নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে তিনবারের নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ওই এমপিকে। যদিও তার দেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আনারের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে। পেশায় ব্যবসায়ী আনার আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।
ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত আনার একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে শুরু করেন। স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে ভোটের রাজনীতি শুরু করেন তিনি।
এরপর বিশাল ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন আনার। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও তিনি জয়ের ব্যবধান দিয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন।