টানা হারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্লে-অফে খেলাটা প্রায় অসম্ভবে পরিণত হয়েছিল। অনেক ‘যদি-কিন্তু’র ওপর ঝুলে ছিল সম্ভাবনাটা। একটা রূপকথাই শুধু তাদের প্লে-অফে জায়গা করে দিতে পারতো। টানা জয়ে শেষ ম্যাচে এসে আশাটা কিছুটা উজ্বল হলেও চেন্নাই সুপার কিংসকে পেছনে ফেলাটা কঠিনই ছিল তাদের জন্য। এর ওপর বৃষ্টির চোখ রাঙানি তো ছিলই। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই শেষে সমীকরণ মিলিয়ে প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে বেঙ্গালুরু।
শনিবার (১৮ মে) ঘরের মাঠে শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় চেন্নাই সুপার কিংসকে ২৭ রানে হারিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৮ রান করে বেঙ্গালুরু। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯১ রানে থামে চেন্নাই। তবে প্লে-অফে জায়গা করে নিতে শুধু জয় পেলে চলত না বেঙ্গালুরুর। চেন্নাইকে ২০০ রানের নিচেই আটকাতে হতো তাদের। সেই সমীকরণ মিলিয়েই চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে বেঙ্গালুরু।
এই ম্যাচ শুরুর আগে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে ছিল বেঙ্গালুরু। অন্যদিকে ১৩ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চারে ছিল চেন্নাই। প্লে-অফ খেলতে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১৮ রানের কম ব্যবধানের হারই যথেষ্ট ছিল রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের দলের। এর বেশি ব্যবধানের জয়ই শুধু বেঙ্গালুরুকে এনে দিত প্লে-অফের টিকিট। স্পষ্টতই সুযোগটা চেন্নাইয়ের বেশি ছিল। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষে আর পারেনি চেন্নাই। ফলে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের এবার প্লে-অফের আগেই থামতে হলো।
আগে ব্যাট করে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির অর্ধশতক ও বিরাট কোহলি, রজত পাতিদার, ক্যামেরুন গ্রিনদের ব্যাটে ভর করে বড় সংগ্রহ পায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১২৯ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে চেন্নাই। সেখান থেকে রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি দারুণ ব্যাটিংয়ে চেন্নাইকে লড়াইয়ে ফেরায়। কিন্তু শেষ ওভারে ধোনির বিদায়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে চেন্নাই।
এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন বিরাট কোহলি। মাত্র ৩ ওভারেই ৩১ রান তুলে ফেলে বেঙ্গালুরু। কিন্তু এর পরেই বৃষ্টি নামে। সে সময় কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে রানের গতি কমে আসে তাদের। সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় অর্ধশত রান পূর্ণ করে বেঙ্গালুরু।
দলীয় ৭৮ রানে স্যান্টনারের বলে বিদায় নেন কোহলি। ২৯ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৪৭ রান করেন তিনি।
১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শতরান পূর্ণ করে বেঙ্গালুরু। তবে ১৩তম ওভারে দলীয় ১১৩ রানের মাথায় বিদায় নেন অধিনায়ক ডু প্লেসি। ৩৯ বলে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৫৪ রান করে রানআউট হয়ে যান তিনি।
রজত পাতিদার- ক্যামেরুন গ্রিনরা জ্বলে উঠলে বড় সংগ্রহের দিকে হাঁটে বেঙ্গালুরু। পাতিদার ২৩ বলে ২ চার ও ৪ ছয়ে ৪১ রান করেন। গ্রিন ১৭ বলে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষের দিকে দীনেশ কার্তিক ৬ বলে ১৪ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৫ বলে ১৬ রানের দুটি ক্যামিও খেলেন।
জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই অধিনায়ক রুতুরাজের উইকেট হারায় চেন্নাই। ১৯ রানের মাথায় ড্যারেল মিচেলও (৪) বিদায় নেন। তবে আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও আজিঙ্কা রাহানের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় চেন্নাই। এই জুটিতে ৬৬ রান যোগ হয়।
দলীয় ৮৫ রানের মাথায় রাহানেকে হারায় চেন্নাই। ২২ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩৩ রান করেন তিনি।
চেন্নাই বিপদে পড়ে পরপর দুই ওভারে রাচিন রবীন্দ্র ও শিভম দুবের উইকেট হারিয়ে। দলীয় ১১৫ রানে রবীন্দ্রকে হারায় চেন্নাই। ৩৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে ৬১ রান করে রানআউট হয়ে যান তিনি। পরের ওভারে ১৫ বলে ৭ রান করা দুবেকে ফেরান গ্রিন।
আর ১০ রান যোগ হতে পরের ওভারে মিচেল স্যান্টনারও (৩) বিদায় নেন। ব্যাকফুটে চলে যায় চেন্নাই।
এখান থেকেই চেন্নাইকে লড়াইয়ে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্লে-অফে জায়গা করে নিতে শেষ পাঁচ ওভারে চেন্নাইয়ের লাগত ৭২ রান। সমীকরণ মেলাতে শুরু থেকেই মারমুখী হন দুজনই।
প্লে-অফে জায়গা করে নিতে শেষ দুই ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ৩৫ রান। জাদেজা-ধোনি মিলে ফার্গুসনের করা ১৯তম ওভারে ১৯ রান তোলেন। ফলে শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। যশ দয়ালের সেই ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে লক্ষ্যটা কমিয়ে আনেন ধোনি। কিন্তু দ্বিতীয় স্বপ্নীল সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন ধোনি। আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন চেন্নাইয়ের সাবেক অধিনায়ক।
পরের বলটিতে ঠাকুর কোনো রান নিতে পারেননি। চতুর্থ বলে একটি রান নিয়ে তিনি জাদেজাকে সুযোগ দেন। কিন্তু জাদেজা সেই দুই বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। শেষ ওভারে মাত্র ৭ রান দেন দয়াল। ২২ বলে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৪২ রান করলেও শেষ দুই বলে সমীকরণ মেলাতে পারেননি জাদেজা। তাতে ঘরের মাঠের ফাইনালে চেন্নাইয়ের দর্শক হয়ে থাকাটা নিশ্চিত হয়। এই নিয়ে নবমবারের মতো প্লে-অফে জায়গা করে নিলো বেঙ্গালুরু।