সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড টিকার প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভারতজুড়ে হইচই পড়ে যায়। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে কোভিশিল্ড টিকা তৈরি করেছিল। কোভিশিল্ডের মতো এবার প্রশ্ন উঠেছে ভারতের আরেক কোম্পানির তৈরি ক্যাভ্যাক্সিন নিয়েও।
ভারতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে দেশবাসীকে দুটি ভ্যাক্সিন বা টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি কোভিশিল্ড এবং অপরটি কোভ্যাক্সিন।
ভারত বায়োটেক নির্মিত কোভিড টিকা কোভ্যাক্সিন-এর দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন ভারতের একদল গবেষক। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত সেই গবেষণার রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিনেরও যথেষ্ট ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকা গ্রহণের পর কৈশোর বয়সের মেয়েরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। কোভ্যাক্সিনের ওপর একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ টিকার বিরূপ প্রভাবের কথা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি প্রতিষেধক এজেডডি১২২২-র (ভারতে নাম কোভিশিল্ড) বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, এই টিকা নিয়ে বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে।
এরপর যুক্তরাজ্য ও ভারতে কোম্পানির বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। ব্রিটেনে আদালতে সংস্থার পক্ষে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া হয়। আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, কোভিশিল্ডের প্রভাবে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি রক্ত জমাট বাঁধা বা প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হলে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। সেই সাথে প্রতিষেধকটি বাজার থেকে তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়। কয়েকদিন না যেতেই এবার কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠলো।
ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) গবেষকদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন এমন ৯২৬ জনের ওপর এক বছর যাবৎ পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছিল।
তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের দেহে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে চর্মরোগ, স্ট্রোক, গিলান-বারি সিন্ড্রোম ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যাডভার্স ইভেন্ট অব স্পেশাল ইন্টারেস্ট’ বা ‘এইএসআই’ বলা হয়। এছাড়া নারীদের মধ্যে ঋতুস্রাবজনিত নানা জটিলতা দেখা গেছে।
বিএইচইউ-এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাদের সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৩৫ জন নাবালক এবং ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্ক। ২০২২ থেকে ২০২৩-এর অগস্ট মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০৪ জন সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে এমন কিশোর-কিশোরী (৪৭.৯ শতাংশ) এবং ১২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক (৪২.৬ শতাংশ) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬৩৫ জনের ৪.৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে স্নায়ুরোগ, ১০.৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে চর্মরোগ এবং ১০.২ শতাংশের কিশোর-কিশোরীর দেহে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা গেছে।
এছাড়া ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮.৯ শতাংশ। পেশি ও হাড়ের সমস্যা দেখা গেছে ৫.৮ শতাংশের মধ্যে এবং স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫.৫ শতাংশ।
গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নারী বা মেয়েদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪.৬ শতাংশ নারীর দেহে ভ্যাক্সিনের প্রভাবে ঋতুস্রাবজনিত নানা সমস্যা দেখা গেছে। এছাড়া ২.৭ শতাংশ নারীর মধ্যে চোখের সমস্যা এবং ০.৬ শতাংশের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা গেছে।
০.৩ শতাংশের স্ট্রোক এবং ০.১ শতাংশের মধ্যে গিলান-বারি সিন্ড্রোম (জিবিএস) দেখা গেছে। এটি এমনই একটি বিরল রোগ, যার প্রভাবে দেহ ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ফার্স্টপোস্ট।