ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই ৭৬তম নাকবা দিবস পালন করেছে ফিলিস্তিনিরা। বুধবার (১৫ মে) দিবসটি উপলক্ষে পশ্চিমতীরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শুধু তাই নয়, দিবসটি উপলক্ষে ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা হাতে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভ হয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও।
গাজার রাফায় ইসরাইলি হামলার কারণে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। এ পর্যন্ত সীমান্ত শহরটি ছেড়ে ছয় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার ৭৬তম আল-নাকবা বা বিপর্যয়ের দিবস পালন করেছে ফিলিস্তিন।
নাকবা দিবসে পশ্চিমতীরের রামাল্লাহর রাস্তা নামেন শত শত মানুষ। ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ জানান ফিলিস্তিনিরা। নিন্দা জানান ইসরাইলি দখলদারিত্বেরও।
এ সময় এক ফিলিস্তিনি বলেন, সম্ভবত আমরা আরো একটি নাকবার সম্মুখীন হয়েছি। আগের চেয়ে এবার আরো ভয়াবহ। এবার গণহত্যা চালানো হচ্ছে। গাজা এবং পশ্চিমতীরে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল আকসা মসজিদ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিহাস পরিবর্তন করা হচ্ছে।
আরেকজন বলেন, গত ৭৬ বছর ধরেই আমরা নাকবার মুখোমুখি। এটা নতুন কিছু নয়। আমরা বারবার হামলার শিকার হচ্ছি। গাজায় আমাদের নতুন বিপর্যয়।
ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বিক্ষোভ হয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও। এদিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। তারা অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ঐতিহাসিক নাকবা দিবসে বিক্ষোভ র্যালি বের করা হয়।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নাকবা। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইসরাইল নামে ইহুদি-সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দিনটি পরবর্তীকালে বার্ষিকভাবে নাকবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এরপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের স্বাধিকার লড়াই চলছে।
আরবি ভাষায় ‘নাকবা’ অর্থ ‘বিপর্যয়’। এটি ১৯৪৭-১৯৪৯ সালের মধ্যে ইহুদিবাদী আধাসামরিক বাহিনীর দ্বারা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশকে পদ্ধতিগতভাবে জাতিগত নির্মূল এবং ফিলিস্তিনি সমাজের প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসকে বোঝায়।
ইহুদিবাদী বাহিনী ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশেরও বেশি দখল করেছে, জাতিগতভাবে প্রায় ৫৩০টি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করেছে এবং ৭০টিরও বেশি হত্যাযজ্ঞসহ ধারাবাহিক নৃশংসতা চালিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।