বাগেরহাট পুলিশ প্রশাসনে তুমুল হৈচৈ ও মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ায় যশোরের আওয়ামীলীগ নেত্রী পরিচয় দেয়া সুইটি ইয়াসমিন লাকি ওরফে নাসিমা সুলতানা মহুয়ার দেয়া ধর্ষণ, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগকেএখন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে।
তিনি বাগেরহাট পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, মোংলা থানার ওসিসহ পুলিশের উর্ধŸতনদের দপ্তরে দিয়েছেন যে একসময় যশোরে পিবিআইতে কর্মরত এবং বর্তমানে মোংলা থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা হিরন্ময় সরকার তাকে দফায় দফায় ধর্ষণ করেছেন, শুধু তাই নয়, শারীরিক সম্পর্কের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও পরে অন্তসত্বা হয়ে পড়েন।এ ছাড়া তিনি অভিযোগ তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকারও বেশী হাতিয়ে নিয়েছেন হিরন্ময়। আর এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে হিরন্ময় সরকারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বাগেরহাট পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা মহুয়া যশোর মহিলা লীগে মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মী বলে বিভিন্ন মহলে পরিচিত। এরই সূত্র ধরে পাঁচ বছর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরে কর্মরত হিরন্ময় সরকারের সাথে তার পরিচয় হয়। নিজের ধর্ম পরিচয় গোপন করে মহুয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ হন হিরন্ময় সরকার।
গোপন রাখেন তার সংসারের কথাও। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক হয়। পরে বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর মহুয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে নানা অজুহাত দেখিয়ে হিরন্ময় ভ্রূণ নষ্ট করান। এরপর হিরন্ময় ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে হিরন্ময় সরকার মোংলা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবে যোগদান করেন। এরমধ্যে গত ৯ মে যশোর থেকে এসে মোংলার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন নাসিমা সুলতানা মহুয়া। পরে মোংলা থানায় গিয়ে বিষয়টি ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার ( মোংলা সার্কেল) মুশফিকুর রহমান তুষারকে সব খুলে বলেন।
এরপর ১১ মে বিকেলে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কাছে সব ঘটনা উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন মহুয়া। পরে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে গত ১২ মে মোংলা থেকে যশোর ফিরে আসেন তিনি। এদিকে পুলিশ কর্মকতার বিরুদ্ধে মহুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ, ভ্রুন নষ্ট ও প্রতারণার নানা অভিযোগের খবরে বাগেরহাট পুলিশ প্রশাসন ও যশোরে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। যশোর জেলা মহিলা লীগে তার অবস্থান নিয়েও নানা তথ্য আসে। মহুয়ার ব্যক্তি জীবন নিয়ে নানামুখি বক্তব্য আসতে শুরু করে। তার চলাফেরা ও অভিযোগের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যশোর জেলা মহিলা লীগের পক্ষে বলা হয়েছে মূলত মহুয়া দলের নাম ভাঙাচেছ। তিনি দলের কেউ নন।
এদিকে যশোর জেলা মহিলা লীগের পক্ষে বলা হয়েছে মহুয়া দলের কেউ নন। দলের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন মহুয়া।
যশোর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লাইজুজামান জানিয়েছেন, তিনি যা করেছেন সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তিনি বলেন, মহুয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে কখনোই জড়িত ছিলেননা। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন নেতার গাঁ ঘেষে ফটো তুলে নিজেকে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
এ বিষয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাবনাম জাহান শিলা জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদেরর নজরে এসেছে। মুলত মহুয়া মহিলা লীগের কেউই নন। কেন তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করলেন বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
ঘটনার ব্যাপারে মহুয়ার বক্তব্য নেয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, মহিলালীগের কোনো পদে তিনি নেই সত্য তবে তিনি এজন সক্রিয় কর্মী। তার সদস্য পদ পাওয়ার কথাও ছিল।
এদিকে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান জানিয়েছেন, হিরন্ময় সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত চলমান আছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে হিরন্ময় সরকারের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হিরন্ময় সরকার জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে তার সাথে মহুয়ার পরিচয় হয়। তার সাথে শুধু বন্ধুত্ব ছিল। কোনো শারীরিক বা প্রেমের সম্পর্ক হয়নি কখনও। মহুয়া অনৈতিকভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যাচার করছেন। তার মানহানী করছেন।”
এ দিকে হিরন্ময় সরকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।