জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় প্রেমিকার সঙ্গে বিষপানে আত্মহত্যা করা মুরাদ শেখ (১৮) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। সে জিপিএ ২ দশমিক ৮১ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
রোববার (১২ মে) সারাদেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে এবারের এসএসসিতে উত্তীর্ণ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আনন্দও কম নয়! সন্তানের সাফল্যে গ্রাম বা শহরের বেশিরভাগ অভিভাবকই পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন। কেউ কেউ আবার মসজিদে মিলাদ কিয়াম ও দোয়ার আয়োজনও করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
উত্তীর্ণ এসব শিক্ষার্থীদের পরিবারে হাসি ফুটলেও ফোটেনি কেবল মুরাদ হোসেনের বাড়িতে। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ফলাফল বাড়িতে আসলেও সে যে আর কোনোদিনই বাড়িতে আসবে না। বড়তারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের আকন্দ তার ফলাফলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল একসঙ্গে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মুরাদ শেখ ও তাজমিন আক্তারও (১৬)। ৮ এপ্রিল ভোরে মুরাদ শেখ জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই দিন রাতেই প্রেমিকা তাজমিন আক্তারও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মুরাদ হোসেন উপজেলার খাঁড়িতা গ্রামের দোলন শেখের ছেলে। সে পার্শ্ববর্তী বড়তারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবাবের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। অন্যদিকে তাজমিন আক্তার একই গ্রামের তোজাম খাঁর মেয়ে এবং বাঁকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুরাদের সঙ্গে তাজমিন আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু দুই পরিবারের কেউই এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এক পর্যায়ে মুরাদকে তার পরিবার মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ঈদ পরবর্তী ২১ এপ্রিলই তার ফ্লাইট ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারকে চাপে ফেলতে তারা দুজনেই পরিকল্পনা করে বিষপানের সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল তারা বিষপান করে। পরে তাদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মুরাদ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
পরে ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদকে ফের জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ওই রাতেই তাজমিন আক্তারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটায় তাজমিন আক্তারেরও মৃত্যু হয়।
বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকারিয়া হোসেন রুমি বলেন, তাদের মৃত্যু আমাদের সকলকে শোকাহত করেছে। যা পুরো এলাকার সকলের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। মুরাদ এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। কিন্তু তার এ ফলাফল কাউকেই খুশি করতে পারেনি। বরং তার পরিবারে নতুন করে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।