গাজায় ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ চালাতে ইসরাইলকে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে কোন দেশ? নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্মমভাবে হত্যায় তেল আবিবকে সহায়তাই বা কেন করছে তারা? আবার বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র নিয়ে তা গাজা যুদ্ধে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরাইল। এই অভিযোগে বেশ কয়েকটি দেশ তেল আবিবে অস্ত্র চালান স্থগিত করেছে। এখন এই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের তালিকায় আছে কোন কোন দেশ।
হামাস নির্মূলের নামে গেল সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এবার সেই হামলা আরও জোরদার করতে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের লাইফলাইন খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় স্থল অভিযানের পরিকল্পনা করে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। এরইমধ্যে রাফার পূর্বাঞ্চলে মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ চালানোর জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে ইসরাইলকে সহায়তা করছে কারা। অন্যদিকে, যেসকল দেশ তেল আবিবকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে তাদের অনেকের আশঙ্কা এসব অস্ত্র দিয়েই গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। এই শঙ্কায় কিছু দেশ তেল আবিবে অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ১০ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়। এ অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সহযোগিতার চুক্তি হয়।
এ ছাড়া সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ৫০০ কোটি ডলার অনুদানের জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬৯ শতাংশ সামরিক সহযোগিতা গ্রহণ করেছে ইসরাইল।
সম্প্রতি ইসরাইলের শক্তিশালী ও বাঙ্কার উড়িয়ে দিতে সক্ষম বোমার একটি চালান স্থগিত করেছে ওয়াশিংটন। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, রাফায় হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইসরাইলকে সরাসরি অস্ত্র না দিয়ে বরং কোম্পানিগুলোকে অস্ত্রের বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির লাইসেন্স দিয়ে থাকে যুক্তরাজ্য। গেল বছর ইসরাইলে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির লাইসেন্স অনুমোদন দেয় ব্রিটেন। এসবের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান, ছোট অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিমান, হেলিকপ্টার এবং অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরির উপকরণ।
অন্যদিকে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ১০ গুণ বাড়িয়ে ইসরাইলে ৩৫ কোটির বেশি ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির অনুমোদন দিয়েছে জার্মানি। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জার্মানি তেল আবিবের সামরিক সহায়তার ৩০ শতাংশ সরবরাহ করেছে। অন্যদিকে ইতালি থেকে এসেছে সামরিক সহায়তার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ সরবরাহ।
তবে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলের সঙ্গে নতুন কোনো অস্ত্র রফতানি চুক্তি করেনি দেশটি। এর আগে যা চুক্তি হয়েছে সে আলোকে তেল আবিবে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে রোম।