Homeসর্বশেষ সংবাদযাত্রাবিরতির দাবিতে কাফন জড়িয়ে রেললাইনে শুয়ে ট্রেনের গতিরোধ

যাত্রাবিরতির দাবিতে কাফন জড়িয়ে রেললাইনে শুয়ে ট্রেনের গতিরোধ

রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘চন্দনা কমিউটার ট্রেন’ ফরিদপুর রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির (স্টপেজ) দাবিতে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের গতিরোধ করে বিক্ষোভ ও কাফনের কাপড় শরীরে জরিয়ে রেল লাইনে শুয়ে পড়ে।

শনিবার (১১ মে) ভোরে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি করে এলাকাবাসী। রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা চন্দনা কমিউটার ট্রেন ভোর সাড়ে ৫টায় ফরিদপুর এসে পৌঁছালে ট্রেনটির গতিরোধ করে স্থানীয়রা। ফরিদপুর রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবি জানিয়ে এ সময় তারা কাফনের কাপড় পরে রেললাইনে শুয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিক্ষোভের মুখে পড়ে প্রায় ৪০ মিনিট ট্রেনটি ফরিদপুর স্টেশনে অবস্থান করে। পরে ট্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবস্থানকারীরা সরে গেলে ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

বিক্ষুব্ধ জনতা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করে। এ সময়ের মধ্যে ট্রেনের স্টপেজ না দেয়া হলে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তারা। এর আগে একই দাবিতে গত ৫ মে ট্রেন চালুর দিনও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আবরার নাদিম ইতু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সাফল্যের আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন দুটি কমিউটার ট্রেন চালু। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো ফরিদপুরের ওপর দিয়ে গেলেও ফরিদপুর রেলস্টেশনে কোনো স্টপেজ রাখা হয়নি। এতে ফরিদপুরের যাত্রীরা সুলভে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলো। চাকরিজীবীরাও যাতায়াতের এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অবিলম্বে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এই চন্দনা কমিউটার ট্রেনের স্টপেজের দাবি জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫ মে ট্রেন চালুর দিনে স্টপেজের দাবিতে মানববন্ধন পালন করা হয়। আজ আবারও কর্মসূচি পালন করেছি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্টপেজ দেয়ার ব্যবস্থা করা না হলে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করা হবে।’

আরেক বাসিন্দা শরিফ খান বলেন, ‘এই রুটে অন্যান্য ট্রেনের ফরিদপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি রয়েছে। কিন্তু চন্দনা কমিউটার ট্রেনের কোনো যাত্রাবিরতি রাখা হয়নি। একমাত্র এ ট্রেনটিতেই চাকরিজীবীরা সকালে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবে। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ফরিদপুর স্টেশনে ট্রেনটির স্টপেজের দাবি জানাই।’

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা পথে বাণিজ্যিকভাবে নতুন করে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে ৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। তবে ফরিদপুর রেলস্টেশনে কোনো যাত্রাবিরতি না থাকায় এ নিয়ে ফরিদপুরের রেলযাত্রীদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

তবে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুতই স্থানীয়দের দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মূলত একটি ট্রেন দুটি ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হবে দুটি রুটে দুটি নামে। রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি এসে ভাঙ্গায় যাত্রাবিরতি নেবে। সেখানে ইঞ্জিন বদলে আবার ঢাকা যাবে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস’। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চন্দনা এক্সপ্রেস’।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন, পদ্মা সেতু ও মাওয়া স্টেশন হয়ে ৯টার মধ্যে ঢাকার কমলাপুরে পৌঁছাবে। এর আগে ট্রেনটি রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৫টায়। সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেনটি কমলাপুর থেকে আবারও একই রুটে ফিরে আসবে।

কর্মজীবী যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা এ ট্রেনে চড়ে স্বল্প খরচে বাড়ি থেকে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবেন। রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এই কমিউটার ট্রেন ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসনের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এ ট্রেনে শোভন চেয়ারে শিবচর থেকে ঢাকার ভাড়া ২০৫ টাকা এবং ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ২২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই রেলপথ দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, রাজশাহী ও নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস চলাচল করে। চারটি ট্রেনেরই ফরিদপুরে যাত্রাবিরতি রয়েছে। কিন্তু চন্দনা কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি ফরিদপুর রেলস্টেশনে না থাকায় এই বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর