আগামী মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হয়তো কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শেষই হয়ে গেল। পয়েন্ট তালিকার প্রায় নিচের দিকে থাকা ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে নিয়মিত অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল তারা। ফলটা হয়েছে ভয়াবহ। ঘরের মাঠে এরিক টেন হ্যাগের দলকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস।
সোমবার (৬ মে) সেলহার্স্ট পার্কে সফরকারী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিক ক্রিস্টাল প্যালেস। জোড়া গোল করেছেন মিকায়েল ওলিসে। এছাড়া জ্যাঁ-ফিলিপে মাতেতা ও টাইরিক মিচেল একটি করে গোল করেন।
ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ শুরুর আগেই ধাক্কা খায়। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন তারকা মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজ। ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনজুরির কারণে ম্যাচ খেলতে পারলেন না ইউনাইটেড অধিনায়ক। প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট ক্লাবটিতে যোগ দেয়ার পর এর আগে পাঁচটি ম্যাচ মিস করলেও তার কোনটিই ইনজুরির কারণে ছিল না।
ইনজুরির কারণে এদিন রক্ষণভাগ সাজাতেও হিমশিম খেয়েছেন ইউনাইটেডের কোচ এরিক টেন হ্যাগ। এদিন দলে ছিলেন না সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়েরও। বাধ্য হয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোকে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলিয়েছে তারা।
এলোমেলো পাসে খেলা শুরু হয় এদিন। এরই মধ্যে প্রথম ভালো সুযোগ কজে লাগিয়েই গোল করেন মিকায়েল ওলিসে। থ্রো-ইনে মুনোজ খুঁজে নেন ওলিসেকে। এরপর বল পায়ে ক্যাসেমিরোকে নাচিয়ে তিনি পৌঁছে যান ইউনাইটেডের ডি-বক্সে। এরপর দ্রুতই বাঁকানো প্লেসিং শটে ওনানাকে পরাস্ত করেন নিউক্যাসলের এই উইঙ্গার।
১৮ মিনিটে সুযোগ আসে ইউনাইটেডের সামনে। কিন্তু ডি-বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া মেসন মাউন্টের শট নিউক্যাসলের রক্ষণদূর্গে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। ২১ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হারায় ঈগলরা । ওলিসের গড়ানো শট ইউনাইটেডের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিলেও ফিরে আসে তার দলেরই মাতেতার গায়ে লেগে।
২৫ মিনিটের মাথায় নিজেদের ডি-বক্সের ঠিক বাইরে গারনাচোকে ফেলে দেন নিউক্যাসলের হিউজেস। রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান ইউনাইটেডের পক্ষে। এরিকসেনের নেয়া ফ্রি-কিক কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ডিন হেন্ডারসন। ২৩ মিনিটে ঈগলরা ফের গোল পেতে পারতো। বাঁ প্রান্ত থেকে টাইরিক মিচেলের বাড়ানো বলে কিক নিয়েছিলেন ফাঁকায় দাঁড়ানো ওলিসে। কিন্তু বল সোজা ওনানার হাতে চলে যায়।
২৬ মিনিটের সময় জটলা থেকে বল নিউক্যাসলের জালে জড়িয়ে যায়। কিন্তু বল জালে জড়ানোর আগে ইউনাইটেডের হয়লুন্দ অবৈধভাবে বাধা দেন ঈগলদের গোলরক্ষক হেন্ডারসন। ফলে রেফারি ফাউলের কারণে তা বাতিল করেন। ২৮ মিনিটে ওলিসেকে ওয়ান টু ওয়ানে পরাস্ত করেন ওনানা। ফলে বেঁচে যায় ইউনাইটেড।
প্রথমার্ধের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ম্যাগপাইরা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বুলেট গতির শট নেন ফিলিপ মাতেতা। ওনানার সাধ্যই ছিল না সে শট ঠেকানোর।
৪২ মিনিটে ক্যাসেমিরোর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধেও ইউনাইটেড নিজেদের ছায়া হয়ে ছিল। এরই মধ্যে ৫৯ মিনিটে তৃতীয় গোল আদায় করে নেয় ঈগলরা। ওয়ার্টন ডান প্রান্ত থেকে বিপজ্জনক ক্রস বাড়ান। অ্যান্ডারসন ব্যাকপোস্টে বল পেলেও দালোতের বাঁধায় টোকা মেরে সামনে দেন। অরক্ষিত মিচেল দ্রুত বলের কাছে পৌঁছে বুলেট শটে জাল কাঁপান।
৬৮ মিনিটে ঈগলদের হয়ে গোল উৎসবের ইতি টানেন প্রথম গোল করা অলিসে। মুনোজ ক্যাসেমিরোকে বাইলাইনে ছিটকে ফেলেন এবং দ্রুত ডি-বক্সের কোনায় ওলিসেকে খুঁজে নেন। বাঁ পায়ের জোরালো শটে চমৎকার দক্ষতায় বল জালে জড়ান এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। এই ম্যাচে মোট আটবার প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের দ্বারা ড্রিবল পাস্ট হয়েছেন ক্যাসেমিরো, যা প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে এক ম্যাচে যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চবার।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৮১ গোল হজম করেছে ইউনাইটেড, যা ১৯৭৬ সালের পর দলটির সর্বোচ্চ গোল হজমের ঘটনা। এই মৌসুমে এই নিয়ে ১৩ ম্যাচ হেরেছে এরিক টেন হ্যাগের দল। প্রিমিয়ার লিগের কোনো মৌসুমেই এতো ম্যাচ হারের রেকর্ড নেই রেড ডেভিলদের।
এই হারে ৩৫ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে ৮ নম্বরে আছে ইউনাইটেড। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় ৭ নম্বরে চেলসি। ৩৬ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে ১৪ নম্বরে ক্রিস্টাল প্যালেস।