শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
বগুড়ার শেরপুরে একটি মাদ্রাসায় তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আমিনপুর শহীদ মিজানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এঘটনা ঘটে। তবে কোন ধরনের টাকা লেনদেন ও অনিয়েমের কথা অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।
মাদ্রাসা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ল্যাব সহকারী ও সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ২ জন এবং ৩ ডিসেম্বর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ১ জন নিয়োগের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে ল্যাব সহকারী পদে ১২ জন, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ১১ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ১৩ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ল্যাব সহকারী পদে ৬ জন, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ৭ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই এলাকার মানুষের কাছে শোনা যায় অনিয়মের নানা অভিযোগ। তাদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায় ল্যাব সহকারী পদে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শাহাদাৎ হোসেনকে, সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে ১৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেলিনা পারভীনকে ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হানজালা আকন্দকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনের পিতা টাকা দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। এজন্য অধিকাংশ আবেদনকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট পদে আবেদনকারী আব্দুল মান্নান বলেন, এই পদে নিয়োগের জন্য আমি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কাছে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিন্তু একজন মহিলা আমার চেয়েও বেশি টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। তাই তাকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য আমি নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যাইনি।
ল্যাব সহকারী আবেদনকারী আরমান হোসেন বলেন,”নিয়োগ পরীক্ষার আগে মাদ্রাসার সুপাররিনটেনডেন্ট ও সভাপতি আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাইলে আমি রাজি হইনি। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই শাহাদৎকে উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার হলে তাকে লিখতে সহযোগীতা করা হয়েছে। এজন্য আমি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি নাই।”
পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা কয়েক দফায় বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে নিয়োগ কমিটির সাথে কথা বলেন। এতে নিয়োগ কমিটি ঘাবড়ে যায় ও সকল অভিযোগ অস্বীকার করে। এর প্রতিফলন ঘটে পরীক্ষার ফলাফলে। তিনটি পদের একজনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বাকি দুটি পদে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট আবু সাইদ সরকার বলেন, “কাংখিত যোগ্য প্রার্থী না থাকায় সহকারী সুপাররিনটেনডেন্ট ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। ল্যাব সহকারী পদে শাহাদাৎ হোসেনকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। “
পূর্ব থেকেই টাকা বিনিময়ে নিয়োগে প্রচারে থাকা শাহাদাৎ হোসেন নির্বাচিত হওয়ায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা বলেন মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ভাগিনা হওয়ার কারণে তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মির্জা এম এ মালেক বলেন, “শাহাদৎ আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। কারও সাথে কোন টাকা লেনদেনের করা হয়নি।”
এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, “ওই মাদ্রাসায় নিয়োগের আগে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ডে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি না থাকার কারণে আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”