ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, আবহমানকাল ধরে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুসংহত করতে হবে। এই সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয় এ বিষয়ে সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাষ্টের আয়োজনে ময়মনসিংহের টাউন হলে ময়মনসিংহ বিভাগের পুরোহিত ও সেবাইত সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ধর্মমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। প্রতিষ্ঠিত হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার। এরূপ অভিপ্রায় থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।
সমাজ গঠনে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা তুলে ধরে ধর্মমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে সকল ধর্মের মানুষের কাছেই তাদের নিজ নিজ ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে, সম্মান করে। বিভিন্ন পরামর্শের জন্য তাদের দারস্থ হয়। তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলে। এই শ্রেণির মানুষগুলোকে আমরা যদি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারি এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে যদি তাদেরকে আরেকটু শানিত বা দক্ষ করে তুলতে পারি তাহলে দেশ ও জাতি অনেক বেশি উপকৃত হতে পারে।
পুরোহিত ও সেবাইতদের উদ্দেশ্যে ধর্মমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারাই পারেন আপনাদের কমিউনিটির মানুষের মধ্যে সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি তাদেরকে আদর্শ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আমাদের সমাজে যে সকল সামাজিক ব্যাধি রয়েছে বিশেষ করে ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি, দুর্নীতি, ভেজাল, মজুতদারির মতো ব্যাধি প্রতিরোধেও আপনারা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তিনি এসকল বিষয়ে পুরোহিত ও সেবাইতদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
মন্ত্রী আরও বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত ও সেবাইতদেরকে আর্থসামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব হলে একদিকে যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে, অন্যদিকে সামাজিক সমতার ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটবে। এছাড়া যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তাদের মধ্যে দেশপ্রেমের বিকাশ ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব হলে দেশ ও জনগণের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হবে। জাতীয়তা ও ভাতৃত্ববোধ দৃঢ় ও অটুট হবে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বেগবান হবে।
ধর্মমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পুরোহিত ও সেবাইতদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হবে। এছাড়া, ভাতাপ্রাপ্ত পুরোহিত ও সেবাইতরা কীভাবে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন সেই সাফল্যগাঁথাও সবাই জানতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে সকলের মধ্যে অনুপ্রেরণা বা প্রেষণা সৃষ্টি হবে। আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, ধর্মীয় ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর অধীনে এ সম্মেলনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাতটি জেলার পুরোহিত ও সেবাইতরা অংশগ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরোহিত ও সেবাইত প্রশিক্ষণ দারিদ্র্য বিমোচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করবে। প্রশিক্ষণ নিয়ে পুরোহিত ও সেবাইতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের বেকার যুবক-যুবতীরা এখানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া পুরোহিত ও সেবাইতরা ভাতাপ্রাপ্তির মাধ্যমে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন। ফলে দারিদ্য বিমোচনে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া সবাইকে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়ে থাকে।