ভারত থেকে রফতানি হয় বা কোনো না কোনোভাবে উৎপাদনে দেশটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ৫২৭টি খাদপণ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এসব খাদ্যপণ্যে ক্যানসারের উপাদান পেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদন মতে, যেসব খাদ্যপণ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই তথা ৩১৩টি বাদাম ও তেল বীজ জাতীয় পণ্য। ৬০টি ভেষজ ও মশলা, ৪৮টি ডায়েটিক খাবার এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য ৩৪টি।
এসব খাদ্যপণ্য এরই মধ্যে ইউরোপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাজার থেকেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবি, ইথিলিন অক্সাইড নামে একটি বর্ণহীন গ্যাস কীটনাশক ও জীবাণুমুক্ত করার রাসায়নিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
রাসায়নিকটি চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যে এই রাসায়নিক কোনোভাবে মিশে শরীরে ঢুকলে লিম্ফোমা এবং লিউকেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভুক্ত দেশগুলোতে খাদ্য-নিরাপত্তা বিষয়টির ওপর নজর রাখে ‘র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড’ (আরএএসএফএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
তারা জানিয়েছে, ৫২৫টি খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকটি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৩২টি পণ্য সরাসরি ভারত থেকে যায়। বাকি খাদ্যপণ্যগুলোতেও ভারতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
রামাইয়া অ্যাডভান্সড টেস্টিং ল্যাবস নামে একটি খাদ্যপণ্য পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা জুবিন জর্জ জোসেফ জানান, ইথিলিন অক্সাইড ছাড়াও আরও দুটি রাসায়নিকের উপস্থিতি মিলেছে।
তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ইথিলিন গ্লাইকল। আফ্রিকায় কাশির সিরাপের মধ্যে এই রাসায়নিকটি পাওয়া গিয়েছিল। সিরাপ খেয়ে বহু শিশুর মৃত্যু হয়েছিল ওই ঘটনায়। জোসেফের মতে, ইথিলিন অক্সাইড চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটা বিকল্প কিছু পাওয়া জরুরি।
তার কথায়, ভারতের খাবারের গুণমান ও নিরাপত্তা-বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দ্য ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যানডার্ডস অথরিটির (এফএসএসএআই) ভেবে দেখা উচিত, যদি বিকল্প জীবাণুনাশক হিসেবে গামা রশ্মির ব্যবহার করা যায়। তাদের উচিত বিভিন্ন শিল্প-সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে ভাবতে উৎসাহ দেয়া।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের এক সমাজকর্মী উদ্বেগপ্রকাশ করে বলেছেন, যে সব খাদ্যদ্রব্য বিদেশে রফতানি করা হয়, সেগুলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। সেগুলোর যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে স্থানীয় বাজারে যা বিক্রি হয়, তার কী অবস্থা কে জানে। সেগুলোও পরীক্ষা করা দরকার।
এতগুলো খাদ্যপণ্যে ক্যানসারের উপাদান থাকায় ভারতীয় খাদ্যপণ্য রফতানিতে ধস নামার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, যেভাবে রফতানিকারকরা খাদ্যপণ্যে বিষের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে তাতে অচিরেই এই সব খাদ্যপণ্য বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ ইতোমধ্যে হংকং ও সিঙ্গাপুরে ভারতীয় মশলা নিষিদ্ধ হয়েছে।