আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এবার বেহাল দশা। বিরাট কোহলির মতো তারকা দলে থাকা সত্বেও পয়েন্ট তালিকার তলানিতে তারা। গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১ রানে হেরেছে বেঙ্গালুরু। এই ম্যাচেই বিরাট কোহলির আউট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ‘নন-পিচিং’ ডেলিভারি বা ফুলটসের নো বল নির্ধারণে প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে নতুন নিয়মে কোহলিকে আউট দেওয়া নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মোট দিচ্ছেন ক্রিকেট–বিশ্লেষক ও সাবেক ক্রিকেটাররা।
গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতার বিপক্ষে ৭ বলে ১৮ রান করে হারশিত রানার ফুলটস বলে ক্যাচ আউট হন বিরাট কোহলি। কোমর থেকে উঁচুতে থাকা বলে লিডিং এজে ফিরতি ক্যাচ দেন কোহলি। কিন্তু অনফিল্ড আম্পায়ার নো বল না দেওয়ায় রিভিউ নেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়াইড বা নো বলে রিভিউ নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আইপিএলে সে সুযোগ আছে। তবে টেলিভিশন আম্পায়ারও মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন এদিন।
তবে সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি কোহলি। ক্ষুব্ধ কোহলিকে মাঠের আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেই কথোপকথনে যোগ দেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ও কোহলি ওপেনিং সঙ্গী ফাফ ডু প্লেসি। মাঠ ছাড়ার সময়ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।
আইপিএলে ‘নন-পিচিং’ ডেলিভারি বা ফুলটস বলে নো নির্ধারণে প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন কৌশল নেওয়াতেই শুরু বিপত্তি। প্রথাগতভাবে নো বল নির্ধারণ করা হলে বলটি ‘নো’ বলই হতো।
নতুন পদ্ধতিতে বলের অনুমিত গতিপথের সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যাটসম্যানের পা থেকে কোমর–উচ্চতার পার্থক্য মেপে নির্ধারণ করা হচ্ছে নো বল। ব্যাটসম্যানের উচ্চতা আগেই মেপে রাখা হয়েছে। বিসিসিআইয়ের এক ভিডিওতে ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ আগেই জানিয়েছেন, অফিসিয়াল ফটোশুটের সময়েই খেলোয়াড়দের উচ্চতা মেপে রাখা হয়েছে। আর বলের উচ্চতা ও গতিপথ মাপা হচ্ছে হক-আইভিত্তিক বল ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে।
টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটে যখন বল লাগে, তখনো সেটির গতিপথ অনুযায়ী তা কোহলির কোমরের ওপরেই ছিল। তবে স্লোয়ার বলটি ক্রমেই নিচু হচ্ছিল এবং কোহলি ছিলেন পপিং ক্রিজের বাইরে। বলটি পপিং ক্রিজে পৌঁছালে যে উচ্চতায় (০.৯২) থাকত, সেটি কোহলির কোমরের উচ্চতার (১.০২) কম ছিল বলে টেলিভিশন আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।
এমসিসির আইনের ৪১.৭.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যেকোনো ডেলিভারি পিচে না পড়ে পপিং ক্রিজে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ব্যাটসম্যানের কোমর-উচ্চতার ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে বা অতিক্রম করত এমন হলে সেটি অন্যায্য বলে গণ্য করা হবে। এমন ডেলিভারি হলে আম্পায়ার নো বল ডাকবেন।
আইপিএলে এই নিয়মই বহাল থাকলেও শুধু বাস্তবায়নের বেলায় প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বিষয়টিকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরকে প্রযুক্তির জন্য ধন্যবাদ। পক্ষপাতের সব অভিযোগ দূর করেছে। আর খেলোয়াড়দের উচ্চতা টুর্নামেন্টের শুরুর আগেই মাপা হয়েছে, যেটির জন্য আমরা অনেকেই অপেক্ষা করছিলাম। ফলে এটা আম্পায়ারদের ব্যাপার নয়; বরং প্রযুক্তির পক্ষপাতশূন্য ব্যবহার।’
ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানও এক্সে এক ভিডিও বার্তায় জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোহলি আউটই ছিলেন। তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন সাবেক খেলোয়াড় মোহাম্মদ কাইফ। তিনি বলেন, ‘ব্যাটের সঙ্গে সংযোগের সময় বল যদি কোমর-উচ্চতায় থাকে, তাহলে এটি নো বল হিসেবে গণ্য করা উচিত। এবং আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, বল ট্র্যাকিংয়ে এর নিচু হওয়ার গতিপথটি বেশি তীক্ষ্ণ দেখানো হয়েছে।’
আরেক সাবেক ওপেনার ওয়াসিম জাফর তো এই নিয়ম বদলানোর পক্ষে কথা বলছেন। তার মতে ব্যাটের সঙ্গে যখন বলের সংযোগ ঘটবে, সেই সময়ে দেখা উচিত বলটি কোমর-উচ্চতায় ছিল কি না।
মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরশ তুললেও ম্যাচ শেষে তা মেনে নিয়েছেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। তিনি বলেন, ‘নিয়ম তো নিয়মই। বিরাট ও আমি ওই মুহূর্তে মনে করেছিলাম, বল তার কোমরের ওপরে ছিল। আমার ধারণা, তারা এটি পপিং ক্রিজের ওপর মাপে। এমন সব মুহূর্তে সব সময়ই একটা দল থাকবে, যারা খুশি হবে। আরেকটা দল থাকবে, যারা মনে করবে, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তবে ক্রিকেট এভাবেই চলে।’