দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ফলে বেকার রয়েছেন এই জনপদের জেলেরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে পেশাও পরিবর্তন করেছেন। এতেও কাটছে না তাদের দুর্ভোগ।
তবে জেলেদের অভিযোগ, সরকারি প্রণোদনার খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও তাও সমবন্টন হচ্ছে না। চাঁদপুরে মতলব উত্তরের একলাছপুরের জেলে রেফায়েত হোসেন জানান, নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তিনি বেছে নিয়েছেন বিকল্প পেশা। কিন্তু তাতেও দুর্ভোগ কমেনি তার। জেলে রেফায়েত হোসেনের মতো আরও অনেক জেলের একই পরিণতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তারপরও নিজ পেশায় এখনো পড়ে আছেন। তাই তো নদীপাড়েই স্বপ্নের জাল বুনছেন বেকার জেলেরা।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা পার হলেই আবারো জাল ও নৌকা নিয়ে ছুটে যাবেন নদীতে। তবে জাল ও নৌকা গড়তে ঋণের কিস্তি পরিশোধের তাড়া জেলেদের সেই দুর্ভোগ আর কষ্ট পিছু ছাড়ছেই না। তাই এসব জেলের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ হচ্ছে।
জেলেদের অভিযোগ, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেকার জেলেরা। সবাইকে সরকারি প্রণোদনার চাল একই পরিমাণে দেয়া হচ্ছে না।
চাঁদপুরে জেলেদের নেতা শাহআলম মল্লিক জানান, তালিকায় নাম আছে, অথচ চাল পাননি। এমন জেলেদের কাছ থেকে প্রতিদিনই নানা অভিযোগ শুনতে হচ্ছে।
তবে পরিমাণে একটু কমিয়ে হলেও সবার মাঝে বণ্টন করা হচ্ছে জানিয়ে মতলব উত্তরের একলাছপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম মুন্না জানান, ৪০ কেজি করে প্রতি জেলের জন্য যে চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা থেকে কিছু কমিয়ে সেই চাল বঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জেলেদের খাদ্য সহায়তার পদ্ধতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মী শামসুজ্জামান খান ডলার জানান, প্রকৃত জেলেদের নিয়ে তালিকা পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং সেই তালিকা ধরে নিষেধাজ্ঞার সময়ে বেকার জেলেদের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া যেতে পারে। এতে জেলেদের মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। ফলে ইলিশসহ অন্যান্য মৎস্য সম্পদ রক্ষা পাবে।
গত পহেলা মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই ২ মাস জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরায় চলছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এরমধ্যে চাঁদপুরে সরকারি তালিকায় জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার। আর সরকারি প্রণোদনার চাল বরাদ্দ পাচ্ছেন ৪০ হাজার জেলে।
তবে অভিযোগ আছে, নানা কারণে এর বাইরে আরও ৫ হাজার জেলে রয়েছে। যাদের তালিকাভুক্ত করা হয়নি। সব মিলিয়ে জেলে পরিবারের সদস্য দুই লাখেরও বেশি।