মিত্রদের পাশে না পেয়ে একাই যুদ্ধের পথে হাঁটছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী একরোখা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইরানের হামলার জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেপরোয়া ইসরাইল। ইরানের বিষয়ে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। যদিও মিত্রদেশগুলো পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এদিকে, তেহরানকে কাবু করতে নিষেধাজ্ঞার খেলাতেই আস্থা রাখছে পশ্চিমা বিশ্ব।
ইরানের নজিরবিহীন হামলার পর দিশেহারা ইসরাইল। প্রতিশোধের জ্বালায় ফুসছেন নেতানিয়াহু। যাদের সমর্থন আর আশির্বাদে হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ত্রাস, এখন সেই মিত্রদেরও কথা শুনছে না তেল আবিব। প্রতিশোধের নেশায় যেন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও ইরানে হামলার সিদ্ধান্তে অনড় তেল আবিব। ইরান ইস্যুতে যেকোনো পদক্ষেপের বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করতে বুধবার (১৭ এপ্রিল) তেল আবিব সফরে যান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক।
তারা আলাদাভাবে নেতানিয়াহুর সঙ্গে করেন বৈঠক। তবে নিজেদের সিদ্ধন্তে অনড় ইসরাইল। ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেয়া হবে সে ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে সাফ জানিয়ে দেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, ইসরাইলকে রক্ষায় বন্ধুদেশগুলো আমাদের পাশে থাকবে। শুধু কথায় নয়, কাজেই সেই প্রমাণ দেবে। তারা আমাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিচ্ছে। তবে আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের সিদ্ধান্ত আমরাই নেবো। ইসরাইল নিজেদের সুরক্ষায় সবকিছু করবে।
ইরানে হামলার বিষয়ে সতর্ক করলেও তেল আবিবকে সব ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। তেহরানকে পঙ্গু করতে আবারো নিষেধাজ্ঞার খেলায় মেতে উঠেছে ইসরাইলের দোসর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোট। যদিও গেলো চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নিষেধাজ্ঞার ভেতরেই বসবাস করছে ইরান। পশ্চিমাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তেহরান।
ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচি, আইআরজিসি ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেবে তারা। একই পথে হাঁটছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান বলেছেন, ইরানের ওপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত তারা। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও রাশিয়ায় ইরানের ড্রোনসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহের ওপরও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তেহরানের ওপর কঠোর ও সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার ছক কষতে ইতালিতে জড়ো হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন-এর নেতারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডারসহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। তাদের সঙ্গে হামলায় যোগ দেয় ইয়েমেনের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। এরপর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও ইসরাইলে রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে জাননো হয়।