ইউরোপের অন্যতম সেরা দুই দলের মধ্যে লড়াইটা ছিল বেশ উপভোগ্য। টানটান উত্তেজনার লড়াইয়ে কখনো ম্যানচেস্টার সিটি এগিয়েছে, কখনো আবার তাদের টপকে গিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে গোলবন্যার এই ম্যাচ শেষ হয়েছে ম্যাড়মেড়ে ড্রয়ে। ইতিহাদ স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচেই নির্ধারিত হবে কোন দল পাবে সেমিফাইনালের টিকিট।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার সিটি ।
রিয়ালের দুর্গ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। তবে সিটিকে চেপে ধরার সুযোগটা দেয়নি রিয়াল। গোল খাওয়ার ১২ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করে লিড নিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে ফিল ফোডেনের দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরায় সিটি। শুধু তাই নয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে এগিয়েও যায় তারা। পিছিয়ে পড়ে ফেদে ভালভার্দের গোলে জয় সমতা আনে রিয়াল। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে।
রিয়াল-সিটির লড়াই উত্তাপ ছড়িয়েছে শুরু থেকেই। শুরুর কয়েক মিনিটে আক্রমণে ভীতি ছড়িয়েছে সিটি। ফলাফলও এসেছে দ্রুত। প্রথম মিনিটে জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিকে গোল করেন বার্নার্ডো সিলভা।
সপ্তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিল সিটি। তবে এবার আর্লিং হলান্ডের শট ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক। শুরুর ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে জ্বলে ওঠে রিয়াল। দুই মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে সফরকারীদের রীতিমতো চমকে দেয় কার্লো আনচেলত্তির দল।
যার ফাউলে ফ্রি-কিক পেয়ে গোল করেছিল সিটি, সেই কামাভিঙ্গাই প্রথম গোল করেন রিয়ালের হয়ে। অবশ্য একটু ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন তিনি। বক্সের বাইরে থেকে তার নেয়া শট সিটির ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াজের গায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
দুই মিনিট পরেই রিয়ালকে লিড এনে দেন রদ্রিগো। ভিনিসিউস জুনিয়রের পাস থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। গোলরক্ষকের পায়ে লেগে বলের গতি কমলেও সেটা জালে জড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
পরপর দুই গোল খেয়ে কিছুটা খেই হারায় সিটি। তবে একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি আনচেলত্তির দল। ৩৩ মিনিটে তো একটি নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া করেন রদ্রিগো। সতীর্থের কাটব্যাক বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় বুলেট গতির শট নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, কিন্তু লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না বল।
বিরতির পরেও আক্রমণে আধিপত্য দেখায় রিয়াল। তবে বারবার সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হয় দলটি। ৫৩তম মিনিটে ডি-বক্সে দুজনের বাধা এড়িয়ে জুড বেলিংহ্যামের নেওয়া শট দূরের পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। আর বক্সের মধ্যে থেকেই ভিনিসিউসের শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে যায়।
এলোপাথারি ফুটবলে সুযোগ হারায় সিটিও। তবে ৬৬ মিনিটে তাদের সমতায় ফেরান দারুণ ছন্দে থাকা ফিল ফোডেন। ডান দিক থেকে সিলভার পাস বক্সের বাইরে ডান পায়ে ধরেই বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি লুনিন।
৭১ মিনিটে রিয়ালকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় সিটি। বক্সের মধ্যে থেকে গ্রিলিশের কাটব্যাক ধরে একটু জায়গা বানিয়ে ২০ গজ দূর থেকে বাঁকানো শট নেনে ক্রোয়েট ডিফেন্ডার ভার্দিওল, বল দূরের পোস্ট ঘেঁষে খুঁজে পায় জালের ঠিকানা।
ম্যাচের নাটকীয়তা তখনও শেষ হয়নি। পিছিয়ে পড়ার ৮ মিনিটের মধ্যে আবারও সমতায় ফেরে রিয়াল। এবার গোল করেন ভালভার্দে। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস, আর ছুটে এসে বুলেট গতির ভলি করেন ভালভার্দে। গোলরক্ষকসহ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জড়ায় জালে।
নির্ধারিত সময়ে একদম শেষদিকে জয় ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি দানি কারভাহাল। ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের।