মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও ‘বলির পাঠা’ হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। একসময় তাদের ওপর জাতিগত নিধন চালালেও, বিদ্রোহীদের দমনে এবার তাদেরই সাহায্য চায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এছাড়া রাখাইনের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রোহিঙ্গাদের জোর করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনের অভ্যন্তরেই বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এর পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যা করা হয় তাদের। সেসময় প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে এ পরিস্থিতিকে ‘জাতিগত নিধন’র উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গণহত্যার অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলছে বিচার। অথচ সেই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকেই আবার সাহায্য চাচ্ছে মিয়ানমার সরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের জোর করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরমধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। জান্তা বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারের সদস্যদের দেয়া হচ্ছে হত্যার হুমকি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া না হলেও, সেনাবাহিনী যোগ দিতে বাধ্য করায় শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা।
রোহিঙ্গারা বলছে, বিদ্রোহীদের তীব্র হামলায় রাখাইনে পতনের মুখে রয়েছে জান্তা বাহিনী। বিপুল সংখ্যক সদস্য হতাহতের পাশাপাশি আত্মসর্ম্পণ করেছেন অনেকেই। আবার অনেকেই দল ত্যাগ করেছে। ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়া সেনাবাহিনী যখন নতুন সদস্য খুঁজে পাচ্ছে না, তখন রোহিঙ্গাদের জোর করে ঝুঁকির মুখে ঠেলছে জান্তা সরকার। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও রোহিঙ্গাদের বানানো হচ্ছে ‘বলির পাঠা’।
এদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেটে পরিণত করেছে জান্তা সরকার। বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে তারা। জান্তা সেনাদের গত কয়েক দিনের হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।