বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়িতে যুবলীগের দুই নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ-দলীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান ওরফে রিপুর সঙ্গে আসা অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
রোববার (৮ এপ্রিল) মধ্যরাতে সদর ফাঁড়ি চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- জেলা যুবলীগের উপ-প্রচার জিয়াদুশ শরীফ পরাগ ও যুবলীগের সদস্য শিহাব উল আলম ওরফে আদনান। তারা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রোববার রাত ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এ সময় উল্টো পথে আসা বেপরোয়া গতির একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদের ছেলে আবীর। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুলের গায়ে ধাক্কা দেয়। এ সময় বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আবীর নিজেকে এমপি পুত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে জাহির করেন। ঘটনাক্রমে সেখানে বগুড়া-৬ আসনের এমপি পুত্র প্রতীত আহসান উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে ‘মদ্যপ’ বলে মন্তব্য করে আবীরের ওপর চড়াও হোন যুবলীগের দুই নেতা জিয়াদুশ শরীফ ও শিহাব উল আলম। শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুলের পক্ষ নিয়ে আবীরকে গালিগালাজ করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে আবীর তার বন্ধুদের ফোন দেন। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন কিশোর সেখানে জড়ো হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সেখানে উপস্থিত থাকা সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ দুপক্ষকে মীমাংসার উদ্দেশ্যে ফাঁড়িতে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খবর পেয়ে রাত সোয়া ১২টার দিকে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু ফাঁড়িতে আসেন। সেখানে ঢোকার পরপরই যুবলীগ নেতা জিয়াদুশ শরীফ পরাগ এগিয়ে গিয়ে তাকে পুরো বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেন।
হামলার শিকার জিয়াদুশ শরীফ পরাগ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে রাগেবুল আহসানের পক্ষে কাজ করেছিলাম। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। অথচ তার সামনেই আমাকে মারধর করা হলো। আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগই দেননি। তার সঙ্গে তো দলের কোনো নেতাকর্মীও ছিলেন না। তাহলে তারা আমাকে চিনতো। তার সঙ্গে আসা ছেলেরা আমাকে আর আদনানকে স্ট্যাম্প ও পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। পুলিশের সামনেই এ হামলার ঘটনা ঘটে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি থানায় এ বিষয়ে মামলা করব।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে। ওখানে আগে থেকেই কিছু ছেলে অবস্থান করছিলো। তারা যাকে (পরাগ) মারধোর করেছে সে নিজেও তো আমার ভোট করেছে। আর আমি ফাঁড়িতে গিয়ে তো আমার ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলিনি। আমি বলেছি যদি তার অপরাধ থাকে তাহলে কাস্টোডিতে নেন। আর যদি অপরাধ না থাকে তাহলে তাকে ছেড়ে দেন। আমার ছেলেটা অপারেশনের রোগী। কয়েক দিন আগে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমি বাবা হিসেবে শঙ্কিত হয়ে ছেলের কাছে গিয়েছি।’
বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানান সংসদ সদস্য।
এ দিকে রোববার রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফাঁড়ির কর্মকর্তা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন সদর সার্কেল অফিসার শরাফত ইসলাম। তবে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি তিনি।
পরে সোমবার বিকেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ঘটনাস্থলে সেসময় পুলিশ সদস্যরা ছিলেন না বলে দাবি করেন সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজন মিঞা।
তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন উত্তেজিত থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে তিনজনকে ফাঁড়ির অফিসকক্ষে রাখা হয়। পরে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ দিকে যুবলীগ নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন করে বগুড়া শহর যুবলীগ। এ সময় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।