Homeসর্বশেষ সংবাদটানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক হবে কয়েক লাখ, নতুন ঢঙে সৈকত

টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক হবে কয়েক লাখ, নতুন ঢঙে সৈকত

ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে লম্বা ছুটি সবারই। এই টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় করবে লাখো পর্যটক। তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার। এরই মধ্যে ৫০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের ৭০ শতাংশ রুম বুকিং। প্রশাসন বলছে, বাড়তি আনন্দ দিতে থাকছে নানা আয়োজন আর চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার। রয়েছে স্বচ্ছ নীল জলরাশির বিশাল সাগর, তার সামনে বিশাল বালিয়াড়ি। যার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। একটু ফুরসত পেলেই দূর-দূরান্ত থেকে এই সৈকতে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক। তবে এবার ঈদুল ফিতরের টানা ছুটির সঙ্গে পহেলা বৈশাখ যোগ হওয়াতে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে কয়েক লাখে। যার কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকত পাড়ের শামুক-ঝিনুক, আচার, শুটকি ও বার্মিজ পণ্যের দোকানে। এরই মধ্যে দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে নতুন সাজ, থাকছে বাহারী পণ্য। লম্বা ছুটিতে এবার চাঙা হবে পর্যটন ব্যবসা এমনই মনে করছেন দোকান মালিকরা।

সৈকতের লাবনী পয়েন্টস্থ ছাতা মার্কেটের মক্কা স্টোরের ম্যানেজার মো. ইমরান বলেন, ‘দোকানে নতুন করে রঙ করা হয়েছে। তারপর নানা প্রকারের চকলেট ও বার্মিজ আচার আনা হয়েছে। এখন এই পণ্যগুলো দোকানে সাজানোর কাজ চলছে। প্রায় ১০ লাখ টাকার চকলেট ও বার্মিজ আচার এনেছি ঈদের এই টানা ছুটিতে বিক্রি করার জন্য। আশা করি বেশ জমজমাট হবে ব্যবসা।’

একই পয়েন্টের সুন্দরবন শুটকি বিতানের স্বত্ত্বাধিকারি আব্দুল মান্নান বলেন, এক প্রকার বা দুই প্রকার নয়; প্রায় ৫০ প্রকারের শুটকি এনেছি এবার বিক্রির জন্য। এখন শুটকিগুলো প্যাকেটজাত করছি। আমরা অনেক আশাবাদী ব্যবসা নিয়ে।

আজাদ স্টোরের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি পাশাপাশি পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলে টানা ৫-৬ দিন পর্যটকে সরগরম থাকবে কক্সবাজার। পর্যটকরা কক্সবাজার আসলেই শামুক-ঝিনুক, মুক্তার মালাসহ নানা পণ্যে ক্রয় করে থাকে। তাই এবার ভিন্ন ধর্মী থাইল্যান্ড, চায়না, মালেশিয়ার পণ্যে আনা হয়েছে। আশা করি, পর্যটকরা কিনে নিবে এবং ভালো ব্যবসা হবে।

অন্যদিকে রমজানের কারণে গেলো একমাস সৈকত পাড়ের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলো ছিল পর্যটক শূন্য। তবে ঈদের আমেজে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন রঙে সাজানো হয়েছে। টানা ছুটিতে তারকামানের হোটেলগুলো শতভাগ বুকিং হবার পাশাপাশি রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউসগুলোর ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে।

কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল সী গার্লের ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ রাব্বী বলেন, এবারে ঈদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকছে। এ কারণে ভিন্ন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এরই মধ্যে পুরো হোটেলের সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। আশা করি ঈদের ছুটি এবং বৈশাখের ছুটিতে পর্যটকদের ভিন্নমাত্রার আনন্দ দেয়া যাবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় করা না হয় তার জন্য সব ব্যবসায়ীদের বলে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ ও হোটেল-মোটেল রেস্তোরা ব্যবসায়ী সবার সঙ্গে বসে পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে আলোচনা হয়েছে। একটি নিরাপদ কক্সবাজার অপেক্ষা করছে লাখো পর্যটকদের জন্য।

পুলিশ বলছে, টানা ছুটিতে পর্যটকদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর বাড়তি আনন্দ দিতে সৈকতে নানা আয়োজন থাকছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলম বলেন, ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। তাই আগেভাগেই সব পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সব প্রস্তুতিও শেষ। আগত পর্যটকদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে। আশা করি নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন সবাই।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, নতুন সাজে সেজেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এক দিকে ঈদের রঙ অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের রঙ। কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা ভিন্নমাত্রা পাবে এবার। যেহেতু সৈকতের কিটকট, জেড স্কী, বিচ বাইক এবং টিউব সবগুলো নতুন রঙে সাজানো হয়েছে সেহেতু নতুন মাত্রায় উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। একই সঙ্গে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ফটো-ফ্রেমও করা হয়েছে।

মো. ইয়ামিন হোসেন আরো বলেন, সৈকতের সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পর্যটকদের যাতে কোনো ভাবেই হয়রানি করা না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে সবাইকে। কেউ যদি কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টুরিস্ট পুলিশের মতে এবারের ঈদে কক্সবাজারে তিন লাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হবে।

সর্বশেষ খবর