সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরাইলি বিমান হামলার প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তেহরান। এরইমধ্যে উপযুক্ত জবাব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে ইরান। এ অবস্থায় রাইসি প্রশাসনের সামনে নেতানিয়াহু প্রশাসন কতক্ষণ টিকবে বিশ্বজুড়ে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
গাজা যুদ্ধ ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার (১ এপ্রিল) সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে নিহত হন ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন।
তেল আবিবের এই হামলাকে তেহরানের নেতারা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করে এর কড়া জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। নিহত জেনারেলদের জানাজার নামাজে অংশ নেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এসময়, হত্যার কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, এই হত্যার জন্য কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে ইসরাইলের জন্য।
কূটনৈতিক মিশনে হামলার ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইসরাইল। তবে এরইমধ্যে অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি এ ঘটনায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পাল্টা জবাব দিতে ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে তেহরান। বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা না দিতে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যমতে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান ১৪তম আর ইসরাইল রয়েছে ১৭তম অবস্থানে।
ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত সেনা থাকলেও ইসরাইলের রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার সেনা। তবে রিজার্ভ সেনার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ইসরাইল। তাদের সেনা রয়েছে চার লাখ ৬৫ হাজার। অন্যদিকে তেহরানের রিজার্ভ সেনা হলো তিন লাখ ৫০ হাজার। তবে, আধাসামরিক বাহিনীর দিক দিয়ে এগিয়ে রাইসি প্রশাসন। দেশটিতে ২ লাখ ২০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে নেতানিয়াহু প্রশাসনের রয়েছে ৩৫ হাজার।
এদিকে, ৬১২টি সামরিক বিমান ও ২৪১টি যুদ্ধবিমান রয়েছে তেল আবিবের। আর তেহরানের সামরিক বিমানের সংখ্যা ৫৫১টি। অন্যদিকে যুদ্ধবিমান ১১৬টি। হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ইসরাইলের ৩৯টি আর ইরানের রয়েছে ২৩টি। ৮৬টি পরিবহন বিমান রয়েছে তেহরানের। তেল আবিবের আছে ১২টি। এছাড়া, ইসরাইলের ১৪৬টি আর ১২৯টি হেলিকপ্টার রয়েছে ইরানের।
অন্যদিকে ইরানের ট্যাংক সংখ্যা এক হাজার ৯৯৬টি। অন্যদিকে ইসরাইলের এক হাজার ৩৭০টি। সাঁজোয়া যানেও এগিয়ে রয়েছে তেহরান। দেশটির ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যান রয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলের রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৩টি। এ ছাড়া ইরানের সাবমেরিন রয়েছে ১৯টি, আর ইসরাইলের ৫টি।
ইরান ও ইসরাইলের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। বিশেষ করে ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য বেশ ঈর্ষণীয়। এ ছাড়া দুই দেশের হাতে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও হামলার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বহু ড্রোন।