দেশের বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। যার প্রভাব পড়ছে রাজধানীর বাজারেও। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
রাজাধানীর বাজারে বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকায়। ক্রেতারা জানান, পেঁয়াজের দাম কমায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে দাম আরও কমা উচিত।
বিক্রেতারা বলেছেন, ফরিদপুরে হালি পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এতে কমছে দাম। তাছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। সেটি এলে দাম আরও কমবে।
আর আড়তদাররা জানান, বাজারে এখন চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দামেও। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের মো. সেলিম মল্লিক বলেন,
আড়ত পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। মূলত বাজারে ফরিদপুরের হালি পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যাপক মাত্রায় থাকায়, দাম পড়ে গেছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন,
এখন হালি পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। ফরিদপুর, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে পেঁয়াজ আসছে। বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। যার প্রভাবে কমছে দাম।
তিনি বলেন, বর্তমানে শ্যামবাজারের আড়তগুলোতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সরবরাহ আরও বাড়লে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে পাবনায় গত এক মাস ধরে ধীর গতিতে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকলেও আমদানির খবরে একবারে নেমে এসেছে অর্ধেকে। জেলার পাইকারি বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। আর ফরিপুরের জেলার পাইকারি বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে।
তবে পেঁয়াজের দামের এই দরপতনে ভোক্তারা খুশি হলেও ক্ষুব্ধ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় এবার লোকসান গুণতে হবে। বাজারে যে দাম মিলছে তাতে উঠবে না উৎপাদন খরচও।
এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রমজানের শেষ ১০ দিনে রোজাদারদের স্বস্তিতে ইফতার করার সুযোগ দিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। টিসিবি জানিয়েছে, এই বিক্রি কার্যক্রম ঢাকার ১০৩টি, চট্টগ্রামের ৫০টি ও গাজীপুরের ১৫-২০টি স্পটে চালানো হবে। প্রতিটি ট্রাকে থাকবে ১০ টন করে পেঁয়াজ।
টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের পাশাপাশি যে কোনো ভোক্তা এই পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ২ কেজি করে কিনতে পারবেন। তবে আড়াই কেজির প্যাকেজ কিনলে দাম পড়বে ১০০ টাকা।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে (৭ ডিসেম্বর) অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যপণ্যটির রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। এ নির্দেশনা ৮ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। এর পরেই বাংলাদেশের বাজারে বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজি ২৫০ টাকার ওপরে উঠে যায় পেঁয়াজের দাম।
কিন্তু মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠলে কমতে শুরু করে দাম। কিন্তু মুড়িকাটার সংকট দেখিয়ে ফের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করে অসাধু সিন্ডিকেট। এরপর গত মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে এবং হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় পড়ে যায় পেঁয়াজের দর। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হতে দেখা যায় ৬০ টাকায়।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৩ মার্চ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে আরও অস্থির হতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠে যায় ৭০ টাকায়।
তবে বাজারে পুরোদমে হালি পেঁয়াজ ওঠায় ও বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসার খবরে আবারও কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ।