২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলো এশিয়া (মধ্যপ্রাচ্যসহ) ও ওশেনিয়া অঞ্চলের। সুইডেনভিত্তিক ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই)’ সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এসআইপিআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির মধ্যে ৯.৮ শতাংশ হয়েছে ভারতে। আর সৌদি আরব আমদানি করেছে ৮.৪ ভাগ অস্ত্র। এরপর রয়েছে কাতার (৭.৬), ইউক্রেন (৪.৯), পাকিস্তান (৪.৩), জাপান (৪.১), মিশর (৪.০), অস্ট্রেলিয়া (৩.৭), দক্ষিণ কোরিয়া (৩.১) ও চীন (২.৯)।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ ও ২০১৯ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে ভারতের অস্ত্র আমদানি ৪.৭ শতাংশ বেড়েছে। যদিও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের ভেতরেই বিপুলসংখ্যক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার।
ভারত রাশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে। গত পাঁচ বছরে ভারতের আমদানি করা অস্ত্রের এক-তৃতীয়াংশের বেশি (প্রায় ৩৬ শতাংশ) রাশিয়া সরবরাহ করেছে।
এছাড়া গত পাঁচ বছরে ফ্রান্স যে দেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করেছে, সেই দেশটিও ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্রান্সের সরবরাহ করা অস্ত্রের ৩০ শতাংশই গেছে ভারতে।
এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে অস্ত্র রফতানিতে প্রথমেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ইতালি। তারপর রয়েছে ব্রিটেন, স্পেন, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া।
২০১৪-১৮ পঞ্চবার্ষিকের তুলনায় ২০১৯-২৩ পঞ্চবার্ষিকে ফ্রান্সের অস্ত্র ব্যবসা ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর ফলে রাশিয়াকে টপকে যুক্তরাষ্ট্রের পর ফ্রান্সই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকর দেশ। মূলত ভারত, কাতার ও মিশরে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার কারণেই ফরাসিদের অস্ত্র ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে।
এসআইপিআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র আমদানি হয়েছে, তার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কিনেছে বাংলাদেশ। আগের কয়েক বছরের তুলনায় এই সময়ে বাংলাদেশের অস্ত্র আমদানি বেশ কমেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ১.২ শতাংশ কিনেছিল।
বাংলাদেশে শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো চীন। দেশটি শুধু বাংলাদেশেই শীর্ষ সরবরাহকারী নয়, বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ অস্ত্র রফতানিকারকও। বিশ্বের মোট অস্ত্র রফতানির ৫.৮ শতাংশ করে চীন।
এদিকে সামরিক শক্তির বিচারে চলতি বছর কোন দেশ কী অবস্থানে আছে-তা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার (জিএফপি)। দেশে দেশে সামরিক শক্তির সক্ষমতা নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৪ সালের সামরিক শক্তি সূচকে বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম, গত বছর যা ছিল ৪০। অর্থাৎ তিন ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের চলতি বছরের প্রতিবেদন বলছে, অতীতের মতো এ বছরও সামরিক শক্তিতে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। তার পরেই দ্বিতীয় স্থানটিতে আছে রাশিয়া। আর চীন রয়েছে তৃতীয় স্থানে এবং ভারত চতুর্থ। শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে থাকা বাকি দেশগুলো হলো-দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইতালি। তালিকার ৩৭ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
জিএফপির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৪৫টি দেশের সামরিক সক্ষমতার সবশেষ সহজলভ্য সামরিক সরঞ্জাম, প্রতিরক্ষা বাজেট, সৈন্য সংখ্যাসহ ৬০টির বেশি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের সূচক তৈরি করা হয়েছে।
এই সূচকে সামরিক শক্তিমত্তা বিচারে দেশগুলোর স্কোরও (পাওয়ার ইনডেক্স) নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে বিশ্বের ৩৭তম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সামরিক শক্তিসূচকে বাংলাদেশ স্কোর পেয়েছে শূন্য দশমিক ৫৪১৯।