রাজবাড়ীতে বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছে কৃষক। পেঁয়াজ পরিপক্ব হওয়ার আগেই এভাবে বিক্রি করায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি অধিদফতর বলছে, বাজারে ভালো দাম থাকায় পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন চাষিরা। আর এভাবে চলতে থাকলে জেলায় পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, পেঁয়াজ চাষে প্রসিদ্ধ রাজবাড়ী জেলায় এ বছর ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার হেক্টর বেশি। জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
রাজবাড়ীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন হালি পেঁয়াজ। যা বর্তমানে পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা করে। বাজারে আসা এই পেঁয়াজগুলো এখনও পরিপক্ব হয়নি। তারপরও বাজারে নিয়ে আসছে কৃষক।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠভর্তি শুধুই পেঁয়াজের আবাদ। পেঁয়াজ গাছের রং এখনো সবুজ। গাছ মারা যাবার পর পেঁয়াজ পরিপক্ব হয়। আগাম জাতের পেঁয়াজ পরিপক্ব হতে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি। কিন্তু মাঠে নারী পুরুষ মিলে এখন পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত। বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম থাকায় এ কাজ করছে চাষিরা।
এসময় কৃষক সোহেল রানা বলেন, এখনও পেঁয়াজ কাঁচা যেকারণে পেঁয়াজের উৎপাদন হচ্ছে অনেক কম। তবে ফলন কম হলেও বাজারে বাড়তি দাম থাকায় আমরা লাভবান হচ্ছি। প্রতিবছর পেঁয়াজ আমদানির কারণে লোকসান গুনতে হয়। এবছরও মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি করলে চাষিদের লোকসান হবে। এই ভেবে এখন কাচা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছে চাষিরা।
ফারুক হোসেন নামের অপর এক কৃষক বলেন, রমজানে ভারত থেকে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করতে পারে তাই এখনই বাজারে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। পেঁয়াজ যদি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি হয় তাহলে আসল উঠে। তার নিচে নামলেই কৃষকের লোকসান। যে কারণে সবাই পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত।
সাইদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, সরকার পেঁয়াজ চাষিদের যে সুযোগ সুবিধা দেয় তা চাষি পর্যন্ত পৌঁছায় না। আবার সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে লোকসান গুনতে হয়। আবার যদি পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকে তাহলে তো কথাই নাই, কৃষকের মাথায় হাত।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অপরিপক্ব পেঁয়াজ না তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারপরও চাষিরা বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ তোলা অব্যাহত রাখছে। আর এভাবে পেঁয়াজ তুলে ফেললে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হবে।