সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন তৃণমুল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। তিনি আরও বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও এই আইনের মোকাবিলা করবেন তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, সোমবার (১১ মার্চ) দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়ন সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ‘মুসলিমবিরোধী’ বিতর্কিত আইনটি কার্যকর করলো নরেন্দ্র মোদির সরকার।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) কলকাতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবরায় এক রাজনৈতিক সভায় যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা। সভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে তিনি বলেন, আমি জীবন দিয়ে হলেও সিএএ মোকাবেলা করব। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সিএএ দিয়ে ভাওতা দেখাচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে আসলে চরম বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তৃণমূল কংগ্রেস যতদিন পশ্চিমবঙ্গে থাকবে ততদিন এই আইন কার্যকর করতে দেয়া হবে না।
প্রশ্ন রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন,
যাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য এই সিএএ আইন করা হয়েছে তারা তো এরই মধ্যে ভারতের নাগরিক। তাদের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী, চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাহলে নতুন করে কেন সিএএ করতে হবে?
শঙ্কা প্রকাশ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, এই আইন করে আসলে যারা নাগরিক আছেন, তাদের কাছ থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হবে। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন,
এর আইনের কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। এই রাজ্যে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে দেব না। আসামের মতো কোনো নাগরিককে ডিটেনশন ক্যাম্প তথা বন্দিশিবিরে পাঠানোর সুযোগ নেই পশ্চিমবঙ্গে।
দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জেতার পরই বিজেপি সরকার ২০১৯ সালে বিতর্কিত আইনটি পাস করে। এরপর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে এটি আইনে পরিণত হয়। কিন্তু আইন হিসেবে এটি এতদিন কার্যকর করা হয়নি।
এই আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। সরকার ঘোষণা করেছে, হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানরা যারা মুসলিমপ্রধান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০১৪ সালের আগে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে পালিয়ে এসেছে, তারা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়কে নাগরিকত্বের সুযোগের বাইরে রাখায় বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ বলে ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইনটি পাশ করা নিয়ে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের কারণে আইনের বিধিমালার খসড়া তৈরি করেনি মোদি সরকার।
বিক্ষোভ চলাকালীন রাজধানী নয়াদিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যা এক পর্যায়ে দাঙ্গায় রূপ নেয়। কয়েকদিন ধরে চলা ওই দাঙ্গায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হন। যাদের অধিকাংশই মুসলিম। এছাড়া শত শত আহত হয়। সোমবার আইনটি কার্যকর করার ঘোষণার পর আবারও ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।