থানা পুলিশের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপদে পুলিশের কাছে গিয়ে কিছুক্ষেত্রে বিপদ আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশ সদর দফতর মনে করে, আগের তুলনায় সেবার মান ও পরিধি বেড়েছে থানাগুলোতে। তাই গুটি কয়েক সদস্যের অবহেলা বা অপেশাদার কর্মকাণ্ডের দায় পুরো বাহিনী নেবে না।
হাতে দেশীয় অস্ত্র এবং মাথায় হেলমেট পরে একটি বাসায় আক্রমণের ঘটনা গত ৫ মাসে অন্তত ১২ বার ঘটেছে। প্রতিবারই গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করতে গেছেন ভুক্তভোগী জসীমউদ্দিন।
কিন্তু হত্যার হুমকি এবং হামলার প্রমাণ সরাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুরের একাধিক ফুটেজ থাকার পরও মামলা না নিয়ে ছয় বার লিখিত অভিযোগ এবং দুইবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়েছে টঙ্গী পূর্ব থানা। ভুক্তভোগী বলছেন, কোনোবারই এই ঘটনায় জোড়ালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।
সবশেষ গত ১ মার্চ আপন বোন আর দুলাভাই জসীম উদ্দিনকে বেধড়ক মারধর করে ভাই হানিফ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সেই দিনই স্ত্রীকে টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নবমবারের মতো মামলা করতে থানায় যান জসীম উদ্দিন। এবারও ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে।
অভিযোগকারী বোন তাসলিমা আক্তার সময় সংবাদকে বলেন, জনগণ তো আইনের কাছে যায় সহযোগিতার জন্য। কিন্তু আমি মরে যাওয়ার পর বিচার করলে আমার ভাই তো কয়েক দিন জেল খেতে চলে আসবে। এতে কী লাভ হলো? এটার দরকার কী? ওই দিন সঙ্গে সঙ্গে মামলা নেয়া হলে আজ আমাকে হাসপাতালে এভাবে থাকতে হত না।
অবশ্য হামলার ৩ দিন পর জসীমউদ্দিনকে ডেকে মামলা নেয় পুলিশ। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, দুইটি জিডি করেছি এবং আটটি অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনোটারই সুরাহা হয়নি। অনেক কিছু হওয়ার পর এবার মামলা নিয়েছে।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর দাবি, তিনি ১৮ বছর সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী ও শ্যালক হানিফকে পাঁচ কোটি টাকা পাঠান। সেই টাকায় বোনের নামেই জমি কিনে বাড়ি করার পর এখন শ্যালক সেই বাড়ি নিজের বলে দাবি করছেন।
হানিফ ও তাসলিমার ভাই আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার ভাইয়ের লোভের কারণে আমর বোন আর তার স্বামী অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
যদিও অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন শ্যালক হানিফ। মামলা নিতে এত গড়িমসি কেন হলো, সেই বিষয়ে ওসি মো. মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন মামলা নেয়ার মতো ঘটনা ঘটে, তখন ঠিকই মামলা নেয়া হয়। আর যখন জিডি করার মতো ঘটনা ঘটে, তখন জিডি করা হয়। আইনে যখন যেটা কাভার করে, তখন সেটাই করা হয়।
এদিকে মিরপুরের লালমাটিয়া এলাকা। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ট ওই এলাকার বাসিন্দারা। ফুটপাতে দোকান দিলেও চাঁদা দিতে হয় বাহাদুর গ্রুপকে। চাঁদা না দেয়ায় পুরো পরিবারকে মারধর করে বাহাদুর গ্যাং।
মারধরের পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করে পরিবারটি। কিন্তু মামলা কেন করা হলো এ কারণে আবারও হামলা হয়েছে পরিবারটির ওপর। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগকারী সাথী আক্তার বলেন, কোন দেশে বসবাস করছি, তা জানি না! আমি একজন মেয়ে মানুষ। অথচ আমার শরীরে হাত তোলার পরও এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না। কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে আমার বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারছি না। আমার স্বামী বের হতে পারছেন না। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
নগরবাসী বলছেন, জিডি করতে গেলেও মাঝে মাঝে ফিরে আসতে হয়। আর পুলিশ সদর দফতর বলছে, অপরাধ বা অসহযোগিতা করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর সময় সংবাদকে বলেন, সেবা দিতে কেউ কোনো ধরনের ভুল করলে বা তার মধ্যে কোনো ধরনের কার্পণ্য থাকলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, মাঠ পর্যায়ে এখনো কাঙ্ক্ষিত সেবার মানসিকতা নেই বাহিনীর সদস্যদের। এজন্য পুলিশের আইন পরিবর্তনের দাবি করছেন অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জিয়া রহমান।
তিনি বলেন, ‘আকাশের যত তারা, পুলিশের ততো ধারা’, ‘মাছের রাজা ইলিশ, রাষ্ট্রের রাজা পুলিশ’- এসব ডিসকোর্স তো আর এমনি এমনি তৈরি হয়নি। মানুষ কোনো না কোনোভাবে পুলিশের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়নি বলেই এগুলো তৈরি হয়েছে।
সন্দেহ নেই অনলাইন জিডি, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯- এর মতো সেবাগুলোতো বটেই; করোনা মহামারির সময়ও জনগণের প্রতি এই বাহিনীর অবদান আছে। তাই গুটিকয়েক সদস্যের দোষের দায়ের কারণে পুরো বাহিনীর অর্জন যাতে ম্লান না হয় সেটি নিশ্চত করার দায়িত্বও বাংলাদেশ পুলিশের।