সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ রাজবধু ও যুবরাজ প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। তিনি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে ‘সীমাহীন বিদ্বেষের বিষ’ ছড়াচ্ছে। মানুষ যেন মানবতা ভুলে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সেই সঙ্গে তিনি নিজেও এই ধরনের বিদ্বেষ ও মানসিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এই মার্কিন অভিনেত্রী। জানিয়েছেন, প্রধানত নারীরাই তার সঙ্গে এমনটি করেছে।
তিনি বলেছেন, দুই সন্তান প্রিন্স আর্চি ও প্রিন্সেস লিলিবেটের জন্মের সময়কালেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে বার্ষিক সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট বা এসএক্সএসডব্লিউ উৎসবে আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন মেগান মার্কেল।
সে সময় স্বামী প্রিন্স হ্যারিও সামনে অতিথিদের সারিতে বসে ছিলেন অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। মেগান বলেন, সুস্থতার জন্য এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন তিনি।
মেগান বলেন, ‘মূলধারার গণমাধ্যম ও অনলাইন মাধ্যমে আমরা যেন আমাদের মানবতা ভুলে গেছে। আমি আমার সন্তান আর্চি ও লিলিবেট গর্ভে থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং অনলাইনে মানসিকভাবে হেনস্থা ও বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছি। আপনি শুধু এটি কল্পনা করুন এবং মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে একটু তাকিয়ে দেখুন, কেন মানুষ এত বিদ্বেষপূর্ণ।
অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ারস, শেপিং ন্যারেটিভস: হাউ উইমেন লিড অন অ্যান্ড অফ দ্য স্ক্রিন।’ অনুষ্ঠানে ৪২ বছর বয়সী সাবেক এই অভিনেত্রী চলচ্চিত্র ও বিনোদনে মাতৃত্বের চিত্রায়ণের গুরুত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মেগান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বোধগম্য নয় যে কেন নারীরা অনলাইনে একে অপরের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এটা তারা কিভাবে করতে পারে তা আমার বোধে আসে না।
প্রশ্ন রেখে মেগান বলেন, আপনি একজন নারীর সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য আপনার বন্ধুদের সাথে কেন শেয়ার করছেন। অথচ এটি আপনার বন্ধু, মা বা আপনার মেয়ের সঙ্গে হলে তা করতেন না। আমি মনে করি, অনলাইন ও গণমাধ্যমে এর পরিবর্তন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন কেটি কুরিক। তার অনুরোধে মেগান তার ১১ বছর বয়সে লেখা একটি চিঠি সম্পর্কে একটি গল্প অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান।
চিঠিটি ‘প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল’ নামে ভোক্ত পণ্য উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিতে পাঠিয়েছিলেন মেগান। ওই চিঠির কারণে তারা নারীদের জন্য নেতিবাচক একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন পরিবর্তন করেছিল।
মেগান আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা আমাকে কথা বলা এবং সমর্থন করার শক্তি যুগিয়েছে। আপনার কণ্ঠ কখনও সীমিত নয়। এটা অবশ্যই শোনানো দরকার।
আরেক আলোচক অভিনেত্রী ব্রুক শিল্ডস ১১ বছর বয়সে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে রসিকতা করেন। তিনি বলেন, একটি চলচ্চিত্রে পতিতা চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। শিশু অভিনেতা হিসেবে এটা ছিল তার পেশাজীবনের প্রথম অভিনয়। ১৯৭৮ সালে ‘প্রিটি বেবি’ তার অভিনীত সেই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক এরিন হেইনস, সাবেক সংবাদ উপস্থাপক কেটি কুরিক, অভিনেত্রী ব্রুক শিল্ডস ও সমাজবিজ্ঞানী ন্যান্সি ওয়াং ইউয়েন।