একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তারা। তবে সেসব এখন সোনালী অতীত। মানসিক দূরত্ব বাড়তে বাড়তে সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের বন্ধুত্ব একসময় দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। শুরুর দিকে বিষয়টি খুব একটা প্রকাশ্যে না এলেও সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় সেটির চরম বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। এতকিছুর মধ্যেই বিপিএলের শেষে সাকিবের প্রশংসা করেছেন তামিম।
বিপিএলে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতলেন তামিম ইকবাল। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে প্রথমবার ট্রফি ছুঁয়েছিলেন তিনি। সেবার ফাইনালে ১৪১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে একাই জিতিয়ে দিয়েছিলেন কুমিল্লাকে। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের শিরোপা জয়টা তামিমের জন্য নিঃসন্দেহে বেশি স্বস্তির।
ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর থেকেই আলোচনায় তামিম ইকবাল। প্রায় এক বছর মাঠে না থাকলেও তাকে নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বেশি। বিপিএল জয়ে যেন সেটারই জবাব দিলেন তামিম। দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি হয়েছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। তবে তামিমের কাছে এই শিরোপা জয় অন্য একটি কারণে বিশেষ।
এবারের বিপিএলে বরিশালের হয়ে শিরোপা জিতেছেন মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কয়েকবার ফাইনালে গিয়েও শিরোপার দেখা না পাওয়া এই ক্রিকেটারদের জন্য এবারের ট্রফিটা তামিমের কাছে বিশেষ। টুর্নামেন্ট জয়ের পর শিরোপাটা তাই তাদেরই উৎসর্গ করেছেন ট্রফি। প্রথমবার শিরোপা জয়ীদের তালিকায় আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সৌম্য সরকারও। তাদের কথাও স্মরণ করতে ভোলেননি অধিনায়ক।
শুক্রবার (১ মার্চ) ফাইনাল জয়ের পর দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তামিম। এসময় তিনি বলেন, ‘অবশ্যই যেকোনো শিরোপা জেতা দারুণ ব্যাপার। তবে এবার একটু ভিন্ন কারণ ছিল। কারণ আমাদের দলে এমন কয়েকজন ছিল, তরুণদের মধ্যে মিরাজ, সৌম্য বা অভিজ্ঞদের মধ্যে রিয়াদ ভাই, মুশফিক—ওরা লম্বা সময় ধরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু ওরা এই (বিপিএল) ট্রফিটা কখনো পায়নি।’
ইনজুরির কারণে এবারের বিপিএলে খেলাই অনিশ্চিত ছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। তবে ফিরে এসে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন এই তরুণ তারকা। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন তিনি। ফাইনাল জেতার পর এই উদীয়মান তারকাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তামিম।
তামিম বলেন, ‘আমার মনে হয় সাইফউদ্দিনের ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে আজ শেষ ওভারে সে অসাধারণ বোলিং করেছে। যদি ১৫ রান হয়ে যেত, তাহলে ১৭০ রানে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ম্যাচ হতো। আমরা তাকে নিয়ে জুয়া খেলেছি। সেটা কাজেও লেগেছে।’
টেস্টের স্পিনার হিসেবে পরিচিত তাইজুল ইসলাম বরিশালের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছেন। জয়ের পর তার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘তাইজুলকে নিয়ে একটা কথা বলা উচিত নয়। আমরা যদি ড্রাফট থেকে তাইজুলকে দলে নিই, তখন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি হাসছিল। সে খুব ভালো করেছে।’ তাইজুলের পাশাপাশি মিরাজের বোলিংয়েরও প্রশংসা করেছেন অধিনায়ক, ‘মিরাজ, সে অসাধারণ। সে হয়তো বেশি বোলিং করেনি। কিন্তু যখন করেছে, তখন খুব ভালো।’
বিদেশি রিক্রুট কাইল মেয়ার্স গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো ম্যাচে ভালো খেলেছেন। তার কথাও ভোলেননি অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচে তার (মেয়ার্সের) ইমপ্যাক্ট ছিল ব্যাট আর বলে।’
নিজের দলের বাইরের ক্রিকেটারদেরও প্রশংসা করেছেন তামিম। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে সাকিবের কথাও বলেছেন তামিম। তিনি বলেন, ‘শরীফুল খুবই ভালো বোলিং করেছে। হৃদয় তো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন। সে যখন রান করেছে, তখন দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে। সাকিব ভালো করেছে। ভালো শুরু হয়নি। তবে শেষের দিকে ভালো করেছে। তবে দুজনের নাম বললে হৃদয় আর শরীফুল।’
এবারের বিপিএলে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছে টুর্নামেন্টটি। শুক্রবার (১ মার্চ) পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া তামিম জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরা এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার।