২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এসে এখন পর্যন্ত আটটি আসর খেলেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এর মধ্যে চারবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। এবারের বিপিএলেও ফাইনালে উঠেছে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের দল। ‘উইন অর উইন’ স্লোগান নিয়ে যে দলটা ২০১৫ সালে বিপিএলে যাত্রা শুরু করেছিল, সে দলটাই বর্তমানে টুর্নামেন্টটির সবচেয়ে সফল দল।
তবে কুমিল্লা বিপিএলে অপ্রতিরোধ্য কেন? প্রশ্নটা জাগতেই পারে। প্রথমত, ক্রিকেট নিয়ে তাদের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, দারুণ টিম স্পিরিট। দল গঠন থেকে শুরু করে কোচিং প্যানেল- সব ক্ষেত্রে দলটার পেশাদারিত্ব বিপিএলে বাকি দলগুলোর জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। তারুণ্যের পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সংমিশ্রণে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এ কথা সবার জানা। তবে তাদের বিশেষত্বটা হচ্ছে, সময়ের সেরা তারকাকে দলে ভেড়ানো চেষ্টা করে। যেমন বিপিএলের সবচেয়ে সফল দলটি বাংলাদেশ দুই সেরা খেলোয়াড় লিটন দাস ও মুস্তাফিজুর রহমানকে দলে ধরে রেখেছে।
একই সাথে দলটি তরুণ ক্রিকেটারদের দলে ভিড়িয়ে তাদের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে থাকে। যেমন- কুমিল্লার মিডল অর্ডার ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় গত মৌসুমে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সিতে দারুণ পারফর্ম করেছেন। আর চলতি বিপিএলের আগে তাকে দলে ভিড়িয়েছে কুমিল্লা। আর কুমিল্লার হয়ে প্রথম আসর খেলা এই তরুণ আপাতত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তাওহীদের গত আসরের পারফর্মেন্সের ওপর ভিত্তি করে যে তাকে মোটা অঙ্ক দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে কোচ সালাউদ্দিন। আর তা উসুলও হয়ে গেছে। তাই কুমিল্লার কোচ মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের বিনিয়োগটা ভালো ছিল। আমরা ঠিক খেলোয়াড়কে নিয়েছি। দুটি ম্যাচ একাই জিতিয়েছে। সে যেভাবে খেলে, স্ট্রাইক রেট বলেন আর যেটাই বলেন, তা দিয়ে দলটাকে এগিয়ে নিয়ে আসে। আমাদের বিনিয়োগটা খুব ভালো হয়েছে।’
পাশাপাশি দলের অধিনায়ক লিটনও সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। এছাড়াও, চলতি বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্পিনার তানভীর ইসলাম সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২২ সাল থেকে কুমিল্লার হয়ে খেলা এই স্পিনার দলটির সবচেয়ে সফল বোলারও বটে। ফলে দেখাই যাচ্ছে, কুমিল্লা বেশ পরিকল্পনা করেই দল গোছায়। আর দেশীয় কোন খেলোয়াড় তাদের দলের সঙ্গে মানাতে পারবে, তা খুব ভালো করেই বোঝে দলের কোচ।
দেশীয় ক্রিকেটারদের কথা তো গেল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কিন্তু বিদেশি ক্রিকেটার ভেড়ানোর ব্যাপারেও বেশ চমক দেয়। এই দলে খেলেছেন রশিদ খান, স্টিভ স্মিথ, রিজওয়ান, খুশদিল শাহ্, নাসিম শাহ্ ডু প্লেসির মতো তারকারা। চলতি মৌসুমেও অভিজ্ঞ সব বিদেশি খেলোয়াড়রা কুমিল্লার হয়ে খেলছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সুনীল নারিন, মঈন আলি, আন্দ্রে রাসেল, জনসন চার্লসের মতো ক্রিকেটাররা। আর তারাও দারুণ পারফর্ম করে যাচ্ছেন। পিএসএল খেলার জন্য পাকিস্তানিরা ফিরে যাবেন- আগে থেকেই এ বিষয়ে তারা অবগত থাকে। সেই ভাবনায় কুমিল্লার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি বিকল্প হিসেবে দারুণ সব ক্রিকেটারদের দল টানে।
বিদেশি ক্রিকেটারদের দল ভেড়ানো নিয়ে কুমিল্লার চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল একবার বলেছিলেন, ‘অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের চেয়ে অনেক আলাদা আমাদের কুমিল্লা। অন্য দলের তুলনায় অনেক আগে আমাদের সঙ্গে বিদেশি খেলোয়াড়রা যোগাযোগ করে থাকে। আমি অক্টোবর মাসে খেলোয়াড় সাইন করাই, যা অন্য দলগুলো হয়তো ভাবতেও পারে না। আমরা অনেক লম্বা চিন্তা করি এবং আমাদের নেটওয়ার্ক এখন অনেক শক্ত।’
এদিকে কুমিল্লার সাফল্যের পেছনে যিনি কাজ করছেন, তিনি বাংলাদেশের সেরা কোচদের একজন। মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ২০১৫ সালে কুমিল্লার কোচ হয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে জিতিয়েছেন শিরোপা। মাঝে চট্টগ্রামের কোচ হিসেবে এক আসর কাটালেও, ২০২২ সালে আবারো তাকে কোচ হিসেবে আনা হয় কুমিল্লার ডাগআউটে। আর দ্বিতীয় মেয়াদে কুমিল্লার দায়িত্ব নিয়েই টানা দুই শিরোপা এনে দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই কোচ। দারুণ পরিকল্পনা, টিম ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা, বছরের পর বছর প্রায় একই দলে খেলার সুবাদে কুমিল্লাও তাই বারবার সফলতার পথে হেঁটেছে।
টানা দুই বিপিএল শিরোপা। সব মিলিয়ে চারবার। কুমিল্লার দৌড় নিশ্চয় এখানেই থেমে যাচ্ছে না। এবারের বিপিএলে শুরুটা ভালো না করলেও, শেষ পর্যন্ত সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে তারা। আর এখন তো তারা টানা তৃতীয় শিরোপার অনেক কাছেই চলে গেছে। গত ১০ বছর যারা বিপিএলে নিজেদের রাজত্ব তৈরির পথে এগিয়েছে তাদের জয়যাত্রা তো এখানেই শেষ হওয়ার নয়। অপ্রতিরোধ্য হওয়ার পেছনে হয়তো ভিক্টোরিয়ান্স নামটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যাদের নামে রয়েছে ভিক্টোরিয়ান্স, তাদের তো জয়ের দিকে চোখ থাকবেই।