দীর্ঘদিনের দাবির পর মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি আগর-আতর শিল্প জিআই সনদ অর্জন করেছে। তবে এ সুগন্ধি তৈরির উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা পড়েছেন বেকায়দায়।
জ্বালানি খরচের দাম কমানো এবং সুগন্ধি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমানে নির্দিষ্ট কৌটা রাখার দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জিআই এ পণ্য উৎপাদনে জ্বালানি খরচ কমানোসহ সবধরনের সহায়তার আশ্বাস জানালেন।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সীমান্ত উপজেলা বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবকটি গ্রামের বাড়ির উঠোন, ঘরের বারান্দা ও তার আশপাশ জুড়ে চলছে সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ধারালো দা আর বাটালির খুটখাট শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত। কেউ ফালি ফালি করে কাটছে আগরগাছ। কেউবা আবার তা থেকে বের করছে লোহার পেরেক। অন্যরা আবার এসব গাছের ফালি কেটে ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরকম দৃশ্য যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এ গ্রামগুলোতে।
আগর-আতর শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানালেন, আগর গাছ এক ধরনের সুগন্ধিয় জাতীয় কাঠ। এ গাছের নির্যাস থেকেই আতর উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে গাছের ভিতরের জমাট-বাঁধা নির্যাসের অংশটুকুই হচ্ছে মূলবান আগর কাঠ। এটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পরবর্তীতে আতর তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে সুগন্ধি মূল্যবান ধুপ হিসেবে ছোট্ট কাঠগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে। এ আগর-আতর এর মূল ক্রেতা (ব্যবহারকারি) মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এখানের ব্যবসায়ীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে রপ্তানির মাধ্যমে এ পণ্য বিক্রি থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে আসছেন।
প্রতিমাসে কম করে হলেও তাদের কারখানায় দুই শো কেজি আগর কাঠ ও আড়াইশ তোলা আতর (এক তোলা ১১.৬৬ মি.লি.) উৎপাদিত হয়। প্রতি তোলা আতর ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আর ধুপ কাঠ প্রতি কেজি ৫০ থেকে এক লাখ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ সুগন্ধির উৎপাদনে শ্রমিকের মজুরিবৃদ্ধি ও গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, এতে উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে অনেক বাড়ছে। এতে তারা চরম বেকায়দায় পড়ছেন।
বড়লেখা সুজানগর পারফিউম কোম্পানির পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস জানালেন, গ্যাসের দাম অধিক হারে বাড়তে থাকায় তার বেশকিছু কারখানা এরইমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে যে পরিমাণ আগর আতর উৎপাদন করতেন। এখন তা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। কারন শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং গ্যাস বিল অনেক।
তার সঙ্গে একমত পোষণ করে আগর আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাৎন্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির আহমদ জানান, জিআই স্বীকৃতীর দাবি ছিলো অনেক পুরানো। সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে ঠিকই। এখন বহিঃবিশ্বে আগর আতর সরবরাহে বিমান কৌটা নির্ধারণসহ অন্যসব সুযোগ করে দিতে হবে। নতুবা এ শিল্প ধরে রাখা কষ্টকর হবে। একই দাবি জানালেন এ সংস্থার সিনিয়র সদস্য সাহেদুল মজিদ নিকু।
গ্যাসের দাম কমানোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের সঙ্গে। তিনি জানান, পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানো হবে। তিনি আশাবাদী এ সমস্যার সমাধান হবে।
আগর-আতর শিল্প সমিতির দেয়া তথ্যমতে, বড়লেখা উপজেলার প্রায় পনেরো হাজার মানুষ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াইশো কারখানা গড়ে উঠেছে।