হাইতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি করা চালে অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম ভারি ধাতু রয়েছে, যা কিনা ক্যানসার এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক এমন তথ্যই উঠে এসেছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হাইতির প্রধান খাদ্য হচ্ছে চাল এবং দেশটিতে প্রচুর পরিমাণে চাল রফতানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এতে মেক্সিকো ও জাপানের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চালের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে হাইতি। তা ছাড়া পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র এই ক্যারিবিয়ান দেশটিতে স্থানীয় কোনো বিকল্পের চেয়ে সস্তায় আমদানি করা বেশি সাশ্রয়ী।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, হাইতিতে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় আমদানি করা চালে গড় আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের ঘনত্ব প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এমনকি আমদানি করা চালের কিছু নমুনায় এই ধাতুর মাত্রা আন্তর্জাতিক সীমাও অতিক্রম করেছে।
প্রায় সব আমদানি করা চালের নমুনাতেই আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের মাত্রা শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) সুপারিশ করা মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। তবে অন্যান্য আমদানিকারক দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা চালে থাকা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়নি গবেষণায়। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে মার্কিন এফডিএ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই অনুরোধের সাড়া মেলেনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইতির মোট আমদানি করা চালের ৯০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত বেশি পরিমাণ চাল আমদানির পেছনে কারণ হচ্ছে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কম শুল্কে আমদানি এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হওয়া।
মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাল ভর্তুকিতে রফতানি করার ব্যবস্থায় সহায়তা করেছিলেন। অবশ্য পরে তিনি সেই পদক্ষেপকে ‘ভুল’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ, এই পদক্ষেপে হাইতিতে স্থানীয়ভাবে চাল উৎপাদনের সক্ষমতা নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুইজিয়ানা, টেক্সাস এবং আরকানস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চাল রফতানিকারক রাজ্য। ২০২০ সালে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সে সময়ে গবেষকরা দেখতে পান, হাইতিবাসী বছরে গড়ে ৮৫ কেজি চাল খান। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রতিবছর মাত্র ১২ কেজি চাল খায়।
এতে হাইতিতে বিশেষত অল্পবয়সী স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে পড়েন বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে।