কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা॥
ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে ৫০ হাজার ১ শত ২৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২২৩ কেজি গাঁজা সহ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪৬ হজার ৫০ টাকার মাদক উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭ টি উপজেলা, থানা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে ‘২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পযর্ন্ত’ ভোলায় মাদক আইনে ৪৩২ টি মামলায় দায়ের করেছেন। এ সময় ৫০ হাজার ১ শত ২৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২২৩ কেজি গাঁজা, ১৮ বোতল ফেন্সিডিল, ১২ বোতল বিদেশী মদ, ১১৬ লিটার স্পিরিট ভিনেচার্জ, ২ লিটার চোলাই মদ, ১ গ্রাম হেরোইন ও ২ বোতল হুইসকি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মাদকের ৪৩২টি মামলায় আসামীর সংখ্যা ৫৮১ জন, পুলিশ গ্রেফতার করেছেন ৫৩৪ জন আসামীকে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে মাদক আইনে ৪৭টি মামলায় ৫৫ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় মোট আসামী ছিল ৬০ জন। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৫৫১ পিচ ইয়াবা, সোয়া ১৭ কেজি গাঁজা ও ১৮ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে ৩৪ টি মাদক আইনের মামলায় ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় মোট আসামী ছিল ৪৫ জন। উদ্ধায় হওয়া মাদকের পরিমান ৩৯৬ পিচ ইয়াবা, সাড়ে ৩২ কেজি গাঁজা ও ১১৬ লিটার স্পিরিট। মার্চ মাসে মাদক আইনে ৩৪ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৯ জন, মোট আসামী ছিল ৫৪ জন। তাদের কাছ থেকে ১৮২৯ পিচ ইয়াবা, সাড়ে ১৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ২৯ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৯ জন, মামলায় আসামী ছিল ৩২ জন। উদ্ধার হওয়া মাদক ৯২১ পিচ ইয়াবা, সাড়ে ৬ কেজি গাঁজা ও ১ গ্রাম হেরোইন। মে মাসে মাদক আইনে ৪৭ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৫ জন, মোট আসামী ছিল ৫৬ জন। ৩০৫১ পিচ ইয়াবা, ২৬ কেজি ৭২০ গাঁজা ও ২ বোতল হুইসকি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। জুন মাসে মাদক আইনে ৩৮ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৮ জন, আসামী ছিল ৪৪ জন। উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্য ১১ হাজার ৪৬৯ পিচ ইয়াবা, ১২ কেজি ৭২০ গ্রাম গাঁজা। জুলাই মাসে মাদক আইনে ৩৮ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৮ জন, মামলায় মোট আসামী ছিল ৫৩ জন। ১৩ হাজার ৪১০ পিচ ইয়াবা, ১৩ কেজি ৭০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। আগষ্ট মাসে মাদক আইনে ৩৬ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫০ জন আসামী, মামলায় মোট আসামী ছিল ৫৪ জন। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৭ পিচ ইয়াবা, প্রায় ২৬ কেজি গাঁজা ও ২ বোতল বিদেশী মদ। সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৩৬ টি মামলায় ৪৬ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলায় মোট আসামী ছিল ৫২ জন। ৩ হাজার ৮২৩ পিচ ইয়াবা, ১৮ কেজি গাঁজা ও ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৩২ টি মাদক আইনের মামলায় ৪৩ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৫০ জন আসামী ছিল মোট মামলায়। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে ১০২৩ পিচ ইয়াবা, সাড়ে ১৭ কেজি গাঁজা । নভেম্বর মাসে মাদক আইনে ২১ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ জন এবং মোট আসামী ছিল ২৪ জন। ৪ হাজার ৯৬৫ পিচ ইয়াবা, ২১ কেজি ৮ শত গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে মাদক আইনে ৩৯ টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৬ জন আসামী এবং মোট মামলায় আসামীর সংখ্যা ছিল ৫৭ জন। ইয়াবা ২৮৪২ পিজ, গাঁজা সাড়ে ১১ কেজি ও ৬ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিনিয়িত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। মাদকের শ্রোত ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।
ইমামদের মাধ্যমে মসজিদে মসজিদে মাদক নিয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরছি এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাদক বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে কাজ করছি। তারপরও মাদকের ভয়াবহতা ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করি।
মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফাতারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান।
এছাড়া পুলিশের আরেকটি সুত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশির ভাগ সদস্য সরকারী দলের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করে। এ জন্য তাদের গ্রেফতার করলেও বেশিদিন আটকানো যায় না।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকের সাথে সমাজের অনেকই জড়িত। তারপরও পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। অভিভাবকরা সচেতন না হলে পুলিশের একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের ধরছি, কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা বেরিয়ে আবার পুরানো পেশায় ফিরে আসছে।