বাগেরহাটে ৩৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা করছেন। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কাজ এবং পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। মামলার জটিলতার কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাগেরহাট সদর উপজেলার দড়িতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবকাঠামোগতভাবে পরিপূর্ণ থাকলেও প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ ছাড়া এই বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় অন্য বিদ্যালয় থেকে ডেপুটিশনে শিক্ষক এনে পাঠদান করাতে হচ্ছে। শুধু দড়িতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নয় বাগেরহাট পৌরসভার উত্তর হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নেই প্রধান শিক্ষক। এভাবে জেলার শত শত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষকরা (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা করছেন। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদায়নের দাবি জানান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
উত্তর হাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শারমিনা হক হীরা বলেন, একজন অভিভাবক ছাড়া বিদ্যালয় চলতে পারে না। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কার্যক্রম দায়সারাভাবে চালানো গেলেও তা পরিপূর্ণ হয় না।
এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলে হেড স্যার নেই। আমাদের একজন স্যার দরকার।
সদরের দড়িতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিতাকুণ্ড বলেন, ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছি। দুই বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। একই সঙ্গে একাডেমিক ও দাফতরিক কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এতে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সহকারী শিক্ষক লুৎফা হক বলেন, আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। ক্লাস ফাঁকা রেখে দাফতরিক কাজ করতে হয়। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের নির্দেশনা আসলে আমাদের অতিরিক্ত চাপে পড়তে হয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত ও অনেক চাপ সামলাতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা।
অভিভাবক তাসমিনা বেগম জানান, স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায়, বিভিন্ন সময় বাচ্চা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লেও সহজে সমাধান করা যায় না। এসব কারণে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান ওই অভিভাবক।
বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, বাগেরহাট জেলায় এক হাজার ১৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আমরা ২১৫টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬০টি বিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পদোন্নতি দেয়ার জন্য সব কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের কিছু অংশ আদালতের আশ্রয় নেয়ার কারণে কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছে। আশাকরি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।