পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ত্রিশ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে জন্ম নিবন্ধন। ভুয়া বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে এসব জন্ম নিবন্ধন চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হাতে। এসব জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে অনেকে। এমন একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, এর সঙ্গে জড়িত আছে মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সচিবের কম্পিউটার অপারেটর!
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ এরই মধ্যে নানা রকমের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। দেশীয় অসাধু চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা তৈরি করছে নকল জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব নকল কাগজপত্র ব্যবহার করে তারা তৈরি করছেন পাসপোর্টও। সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে অনেকে আবার এরই মধ্যে পাড়ি জমিয়েছে বিভিন্ন দেশে।
রোহিঙ্গাদের নকল জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিচ্ছেন আসলে কারা? এরকম কিছু জন্ম নিবন্ধনের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ খুঁজে পেয়েছে একটি চক্র। এর মধ্যে আছেন দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার মেয়র সবুজার সিদ্দিক সাগরের কম্পিউটার অপারেটর আব্দুর রশিদ এবং রানী পুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আল্লামা আজাদ ইকবাল ও ইউনিয়ন সচিব মোহাম্মদ মানিক হোসেনের কম্পিউটার অপারেটর সোহেল চন্দ্র।
মেয়র ও চেয়ারম্যানের আইডি ব্যবহার করে তারা শত শত নকল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের তৈরি করা জন্ম নিবন্ধনের বেশিরভাগের জন্মস্থান কক্সবাজার আর স্থায়ী ঠিকানা বিরল পৌরসভা। তাদের সবাই রোহিঙ্গা। পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গাদের বাইরেও অনেক সন্ত্রাসী এ চক্রের তৈরি করা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে দেশ ত্যাগ করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গারা ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র এমনকি পাসপোর্টও বানিয়ে নিচ্ছেন। তাদেরকে সহযোগিতা করছেন আমাদের দেশের কিছু মানুষ, যারা মেয়রের কম্পিউটার অপারেটর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সচিব অথবা নির্বাহী কর্মকর্তার কম্পিউটার অপারেটর।
তিনি আরও বলেন, অনেক অপরাধীকে পুলিশ খুঁজছে। কিন্তু তারা জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যভাবে বানিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, ভুয়া পাসপোর্টও হয়ে যাচ্ছে। সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে অনেক কুখ্যাত খুনি ও অপরাধী তাদের পরিচয়টা গোপন করে ফেলছে।
চক্রে পাসপোর্ট অধিদফতর ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের অসাধু লোকজনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।