উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।।
একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত চারণকবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ১২২তম জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি)।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে তার (বিজয় সরকারের) জন্মভূমি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদী গ্রামের নিজ বাসভবনে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার বেলা ৪ টা ১০ মিনিটে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ,৪ টা ১৫ মিনিটে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সাড়ে ৪ টায় আলোচনা সভা, সন্ধ্যায় বিজয় গীতি পরিবেশনা ও ভাবগানের আসর।
(২০ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার দিনব্যাপী উন্মুক্ত বিজয় গীতি পরিবেশনা, বিকালে আলোচনা সভা, রাতে কবিগানের আসর। কবিগান পরিবেশনা করবেন প্রভাষ সরকার ও সন্তোষ সরকার।
বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সুলতান মাহমুদ জানান, বিজয় সরকারের দু’দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী উৎসব সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার। পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ একদিন ভাবি নাই মনে। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/ একদিন চলে যেতে হবে। তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’-এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন।
তিনি অনেক ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের। কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষনাৎ নিজের রচিত আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন।
১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেলুড়িয়া নামক স্থানে কন্যা বুলবুলির বাড়ি বিধান পল্লীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণ কবি।
অজপাঁড়াগায়ে জন্মগ্রহণ করেও তিনি (বিজয় সরকার) লোকসঙ্গীত ও কবিগান রচনা করে ও গেয়ে সবার মাঝে আলো ছড়িয়েছিলেন। তার রচিত আধ্যাত্মিক গান আজও সবার মনে-প্রাণে নাড়া দেয়।