মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি বলেছেন, দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে উদারতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে চলমান মিয়ানমার সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক করেছেন মার্কিন এ কূটনীতিক। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতার কারণে যে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়েছে, তা আরও খারাপ হবে এবং প্রতিবেশি দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও পেন্টাগনের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন লু।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমামে এই মুহূর্তে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেশটির সেনাশাসিত সরকার ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। সম্প্রতি জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তা চরম রূপ নিয়েছে।
এমনকি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় বেশ কয়েকজন জান্তা সেনা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি মিয়ানমারের চলমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ডোনাল্ড লু মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক সরকারি গবেষণা সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)-এ আয়োজিত বৈঠকে তিনি বলেন,
মিয়ানমার পরিস্থিতির সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ও সম্ভবত ভারতের জন্যও যে শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে, যা সামনে আরও গভীর হতে পারে।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছেন।
লু বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ, সেখানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বার্মায় অস্থিরতা এই অঞ্চলের জন্য কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে (পড়াশুনা করতে) অনেক সময় ব্যয় করেছি।
তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য ঢাকা যে উদারতা দেখিয়েছে তার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করেছে। অনন্য এই উদারতা দেখার জন্য আমার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কক্সবাজার পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছিল। আমি এসব শরণার্থীকে ঘরে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রত্যক্ষ করেছি।’
লু আরও বলেন,
আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং এই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে সমর্থন করতে হবে, যাতে তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা বাড়তে না দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারে।
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়নের বিষয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এই নতুন বিশ্বকে পরিচালনা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে লু মালদ্বীপের উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, এটা এমন জায়গা যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ অন্যান্য দেশ নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা করছে। আমরা আরও ভালো কাজের মাধ্যমে জয়লাভ করব। আমার মত হলো চীন তখনই একটি ভালো অংশীদার হবে যখন সেখানে যথার্থ ও সত্যিকারের প্রতিযোগিতা থাকবে।