কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনি। মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন, তখন নাভালনি সুস্থ ও হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। অনেকেই তার মৃত্যুর জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেছেন।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রুশ কারা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নাভালনির মৃত্যুর সংবাদ জানায়। এক বিবৃতিতে ইয়ামালো-নেনেটস জেলার কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার হাঁটার পরে হঠাৎ নাভালনি অসুস্থ বোধ করেন। অসুস্থ বোধ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিক জরুরি মেডিকেল টিমকে ডাকা হয়। তারা এসে চেষ্টা করলেও নাভালনিকে বাঁচাতে পারেননি।
অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তবে, সে বিক্ষোভ দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি রুশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তায় নামা বিক্ষুব্ধদের টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে, সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে নাভালনির স্বরণে মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে তার ছবির সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ মানুষ।
রাশিয়া ছাড়াও নাভালনির মৃত্যুতে বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এরইমধ্যে জার্মানির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। এসময় পুতিন বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে রুশ দূতাবাসের সামনেও অবস্থান নেন অনেকে। এমনকি, আত্মার শান্তির জন্য মোমবাতিও প্রজ্জ্বলন করা হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নাভালনির মৃত্যুতে পুতিনকে দায়ী করে বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনেও। এসময় প্লাকার্ড হাতে নাভালনিকে দেশের হিরো বলে স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইউর্কেও বিক্ষোভ হয়েছে। প্লাকার্ড হাতে পুতিন বিরোধী নানা স্লোগানের পাশাপাশি হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিও করা হয়। এছাড়া রাশিয়ার কারাবন্দি বিরোধী এ নেতার মৃত্যু প্রতিবাদে ফ্রান্স, ইতালি স্পেন, আয়ারল্যান্ডসহ বিভেন্ন দেশে বিক্ষোভের পাশাপাশি মোমবাতি প্রজ্জ্বলনও করেন সাধারণ মানুষ।
আর নাভালনির মৃত্যুতে মোটেও আশ্চর্য নন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মৃত্যুর জন্য পুতিনকে দায়ী করে কারাগারে হত্যার অভিযোগ করেছেন তিনি। নাভালনি অত্যন্ত সাহসী নেতা ছিলেন বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, রাশিয়ার বিরোধী এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে হতবাক জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনার পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্তে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে নাভালনির মৃত্যু ক্রেমলিনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েন ম্যাক্রো। একইসঙ্গে এ ঘটনার পর থেকে পুতিন বিরোধীরা আরো চাপে থাকবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে, তাকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন বেলারুশের বিরোধীদলের নেতা। এসময় পুতিনের কোনো শত্রুই রেহাই পাননা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে, বিশ্বজুড়ে নানা সমালোচনার মধ্যেই নাভালনির মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তার স্ত্রী। আর সত্যিই মারা গেলে পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বক্তৃতা দেয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।
২০২১ সাল থেকে কারাবন্দি ছিলেন পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনি। ক্রেমলিন বিরোধী উগ্রপন্থা উসকে দেয়া, তাদের অর্থায়ন এবং নির্বাচনে জালিয়াতির কথিত অভিযোগে ভোগ করছিলেন ত্রিশ বছরের বেশি কারাদণ্ড। যদিও এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করেন এ নেতা।