প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন এমন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি, যেগুলোতে কম অর্থের প্রয়োজন, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সভাপতিত্বকালে দেয়া সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য যে প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সেগুলো আমাদের নিতে হবে। প্রকল্প বাছাই করার সময় সে বিষয়টা, আমাদের একটু দেখা দরকার, যাতে আমরা আমাদের লক্ষ্যটা অর্জন করতে পারি। যেসব প্রকল্প অল্প খরচ করলেই দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, সেগুলো সম্পন্ন করে ফেলা উচিত। তাহলে আমরা আবার নতুন প্রকল্প নিতে পারবো। কিছু কিছু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে আমার মনে হয়, সেগুলোও দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। কারণ দ্রুত শেষ না করলে খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি অহেতুক কালক্ষেপণ হয়, সেটা যেন আর না হয়।
আজকে বৈশ্বিক কারণেই কিছু অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে, তাছাড়া আমরা খুব ভালভাবেই এগোচ্ছিলাম। আমাদের প্রবৃদ্ধিও সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। দেশের উন্নয়নটা তরান্বিত হচ্ছিল। এ সময় কোভিড-১৯ অতিমারী আসায় বিশ্বব্যাপী সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ল। এরপর যখন আমরা এটি মোকাবিলা করে এর থেকে উত্তরণ ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, তখনই এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশন, এখন আবার গাজায় যেভাবে গণহত্যা চলছে এবং আক্রমণ চলছে, বিশ্বব্যাপীই একটি অশান্ত পরিবেশ। যার কারণে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়ও বেশি লেগে যাচ্ছে। বহির্বিশ্বের নানা কারণে চাপটা আমাদের ওপরও এসে পড়েছে।
দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদের পাশাপাশি জলাভূমিগুলোতে মাছ চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা অনুপস্থিত মালিক, তারা একটা অংশ পাবে কিন্তু তাদের অংশটা একটু কম হবে, যারা শ্রম দেবে তারা একটা অংশ পাবেন, আর সমবায়ের জন্য একটা অংশ থাকবে। যাতে করে খরচটা চালানো যায়। আমি এটা করে যাচ্ছি এবং আমি মনে করি এটাতে সফল হতে পারলে এবং সারা বাংলাদেশে এটা চালু করে দিতে পারলে, কোন জমি আর অনাবাদি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু জিনিস আমাদের বাইরে থেকে আনতেই হয়। তারপরেও সার্বিক উৎপাদন বাড়ানো গেলে এর শুভ ফলটা জনগণ পাবে, অন্যের ওপর আর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না।
তিনি উদাহারণ দেন, এ সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করায় এখন দেশের প্রয়োজনের ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। ভোজ্যতেলের ৯০ শতাংশ আমদানি নির্ভর। কিন্তু এবার আমাদের যে পরিমাণ শর্ষে হয়েছে তাতে ৪০ শতাংশ, আমরা এই শর্ষের তেল দিয়ে বা ধানের তুষ থেকে সৃষ্ট রাইস ব্রান্ড অয়েল উৎপাদন করছি, এভাবেই ধীরে ধীরে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া মাছ, মাংস, দুধ -ডিমের উৎপাদনও বেড়েছে। মানুষের এগুলো গ্রহণের হারটাও বেড়েছে। যারা আগে আমিষ খাবারের কথা চিন্তা করত না, এখন তারাও নিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে একেবারে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা আমাদের দরকার। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নিতে হবে।