নানা কারণে এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পাকিস্তানের ১৬তম জাতীয় নির্বাচন। ভোটাভুটি শেষ হলেও সরকার গঠন নিয়ে এখনও কাটেনি জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির আসন্ন পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শংকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও বাড়বে।
পাকিস্তানের নির্বাচনের তিনদিন পেরোলেও এখনও কাটেনি অনিশ্চয়তা। পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান কে হচ্ছেন কিংবা কারাই সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন তা নিয়ে জনমনে রয়েছে বিভ্রান্তি। রাজনীতি প্রশ্নে কার্যত বিভক্ত গোটা দেশ। এই যখন পরিস্থিতি সেসময় প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের পরিস্থিতি?
পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা বরাবরই অস্থিতিশীল। এ পরিস্থিতিতে এমন একটি নির্বাচন দেশটিতে বিদ্যমান বিভাজন এবং রাজনৈতিক ফাটলকে আরও গভীর করবে বলে শংকা বিশ্লেষকদের। বলছেন, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জেরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে জনগনের আস্থা আরও কমবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিভ্রান্তিকর এই নির্বাচনের ফলাফল অর্থাৎ জোট সরকার পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হবে। পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে বলেই মনে করছেন তারা। ফলাফল, অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকটের পাশাপাশি মাথাচাড়া দেবে সন্ত্রাসবাদও।
পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, কারাবন্দি ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী ১০০টি আসন জিতেছে। ৭৩টি আসনে জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)।
৫৪ আসন নিয়ে তৃতীয় তরুণ রাজনীতিক বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি)। অন্যান্য দল পেয়েছে ২৯টি।
এগুলোর মধ্যে ১৭টি আসন পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মুত্তাহিদা কওমি পার্টি (এমকিউএম-পি)। আর মাত্র ৯টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি আছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী রোববার পর্যন্ত পুরোপুরি ফল সামনে আসবে।
পুরো ফলাফল ঘোষণা হলেও কোনো দলই এককভাবে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৪টি আসন পাচ্ছে না। ফলে নিশ্চিতভাবেই জোট সরকারের দিকেই যেতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।
এমন অবস্থায় এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো শেষ পর্যন্ত কোন দল সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। পাকিস্তানি বিশ্লেষক জাইঘাম খান বলেছেন, প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর জোট সরকার গঠন নিয়ে দুটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি বা চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে খান বলেন, প্রথম চিত্র হলো এমন একটি জোট সরকার যাতে সব রাজনৈতিক দল থাকবে। থাকবে না শুধু পিটিআই।
প্রথম সম্ভাব্য চিত্রের জোট সরকারের অংশীদার হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ও বিলাওয়ালের পিপিপি। পাশাপাশি এমকিউএম, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ছোট দলগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, পাক সেনা কর্তৃপক্ষও এটাই চায়।
জাইঘাম খানের মতে, দ্বিতীয় চিত্র হলো পিটিআই’র সাথে হাত মেলাতে পারে বিলাওয়ালের পিপিপি। যদিও এর সম্ভাবনা কম। তবে কৌশলগতভাবে সম্ভব। কারণ পিটিআই সরাসরি নির্বাচন করতে না পারলেও দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন জিতে নিয়েছে।