পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশটির স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়; যা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তবে ভোট শেষ হওয়ার আগেই দেশটির এবারের নির্বাচনে কে জিতছেন, তা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যম ও থিংক-ট্যাংক।
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ ছোট-বড় প্রায় ১৪টি রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচনের মাঠে নামতে দেয়া হয়নি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পিটিআইকে। কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে বন্দি ইমরান। আর এসব মামলার কারণে তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কেড়ে নেয়া হয়েছে তার দলের প্রতীক ব্যাটও।
তবে পিটিআইয়ের প্রতীক কেড়ে নেয়ায় দলটির প্রার্থীরা সবাই স্বতন্ত্র হিসেবেই লড়ছেন। দেশটির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগই ইমরান খানের দলের। প্রায় ২৩৬ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র চার ঘণ্টা হয়েছে। তবে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও থিংক ট্যাঙ্ক বলছে, চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসছেন নওয়াজ শরিফ। বিবিসি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান ও এএফপিতেও এ ধরনের তথ্য দেয়া হচ্ছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বৃহস্পতিবারের ভোটে যদি নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় না আসেন, তাহলে এটি খুবই ‘বিস্ময়কর’ হবে। চতুর্থবার ক্ষমতায় আসলে নওয়াজ যেসব অভিযোগের কারণে ২০১৭ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন। তবে তাকে ইমরান খানের সমর্থকদেরও মুখোমুখি হতে হবে।
ব্লুমবার্গ লিখেছে, গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এবারের নির্বাচন ঝুলন্ত সংসদ এবং তারপর একটি দুর্বল জোট সরকার গঠন হতে পারে। তাদের বেশিরভাগই আশা করছেন, সেই জোট সরকার নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বেই হবে অথবা তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের নেতৃত্বেও হতে পারে।
ব্লুমবার্গ আরও বলেছে, নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসলে তাকে দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন ব্রুকিংস ইন্সটিটিউটের ফরেন পলিসি ফেলো মাদিহা আফজাল। একটি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা, আরেকটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে ম্যানেজ করা চলা।
এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে আছেন ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ। স্বেচ্ছায় নির্বাসনের পর ৭৪ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসলে তা একটি ‘স্মরণীয় ফিরে আসা’ হবে।
সিএনএন আরও বলেছে, তবে নওয়াজ শরিফকে আরেক শক্তিশালী প্রার্থী ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে মোকাবিলা করতে হবে।
সাবেক সিনিয়র ব্রিটিশ কূটনীতিক ও কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসির মতে, ‘নওয়াজ শরিফ অভিজ্ঞ। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। তিনি ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চাইবেন।’
বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, গত অক্টোবর দেশে ফেরার পর ও আদালত নওয়াজ শরিফের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করার পর তার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইমরান খান এখন কারাগারে। আর এ পরিস্থিতি ২০১৮ সালের নির্বাচনের ভাগ্য পরিবর্তনের মঞ্চ তৈরি করেছে, যখন নওয়াজ আইনি মামলার সঙ্গে লড়াই করছিলেন আর ইমরান প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার ইমরান খান কারাগারে থাকায় নওয়াজের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন থিংক-ট্যাংক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, নওয়াজ শরিফ ও তার দল পিএমএল-এন ক্ষমতায় আসতে পারে। যদি পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে জেতেন তাহলে এটা কোনো চমৎকারের চেয়ে কম হবে না।
মার্কিন থিংক- ট্যাংক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’ বলেছে, ‘পাকিস্তানের রাজনীতিতে টিকে থাকা, নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং তার দলের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন তার সংসদে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথ সহজ করেছে। নওয়াজ নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে নমনীয়।’
স্পুটনিক জানিয়েছে, নির্বাচনের পর নতুন প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট ও বাড়তে থাকা সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হতে হবে। এসব সমস্যা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিকে বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী (নওয়াজ শরিফ) এবারের নির্বাচনে জোরালো লড়াইয়ের পরিবর্তে নতুন করে সরকার গঠনের আশা করছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে শাস্তির আওতায় ফেলে আটকে রাখা হয়েছে। যদি বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হবেন।