পাকিস্তানে ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন না কোন শাসকই। ১৯৪৭-এর পর থেকে ৭৭ বছরে ২৩ প্রধানমন্ত্রীর কেউই পাঁচ বছর থাকতে পারেননি গদিতে। এদের মধ্যে কেউ পদ হারিয়েছেন সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে, কেউবা দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে। আর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মধ্যদিয়ে দেশটিতে ইতিহাস গড়ার নজিরও রয়েছে।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের বয়স ৭৭ বছর। নানা সমীকরণে দেশের রাজনীতিতে বাঁক-বদল এসেছে বেশ কবার। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচিত হন ২৩ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কেউই পূর্ণ করতে পারেননি ক্ষমতার পাঁচ বছর মেয়াদ। নির্ধারিত মেয়াদের আগেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীদের নানা কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত হন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি। মৃত্যুর আগে ৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাজা নাজিমুদ্দিন। তবে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত গভর্নর-জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর, ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল মোহাম্মদ আলীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মাত্র দুবছর পরই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে।
এরপর ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পাকিস্তানে ১৯৫৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার। ঐ বছরই ফিরোজ খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন।
পরে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সামরিক শাসনের মধ্যে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের প্রশাসনের অধীনে নুরুল আমিনকে করা হয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি ১৯৭৭ সালে আবারও সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন। মুহাম্মদ খান জুনেজো ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ সামরিক শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে, তাকে বরখাস্ত করা হলে ঐ বছরই পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন বেনজির ভুট্টো।
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। তিন বছরের মাথায় নওয়াজ শরিফের সরকারকে বরখাস্ত করা হলে প্রধানমন্ত্রী হন বেনজির ভুট্টো। ১৯৯৭ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর আবারও প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন নওয়াজ শরিফ। পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শওকত আজিজ, ইউসুফ রাজা গিলানি ও রাজা পারভেজ আশরাফ।
২০১৩ সালের জুনে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ করেন নওয়াজ শরিফ। এরপর ২০১৭ সালে ২১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় শাহীদ খাকান আব্বাসিকে। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট পাকিস্তান শাসনের ভার পান ইমরান খান। তবে দেশটির ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। পরে ২০২২ সালে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ।