সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার আঁচ বাংলাদেশ সীমান্তে এসেও পড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। এর আগে ওবায়দুল কাদের চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশের সাথে নয় মিয়ানমারের আরাকানের অভ্যন্তরীণে যুদ্ধ চলছে; এটা সীমান্তে চলে এসেছে। এরফলে সীমান্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন,
বর্তমানে মিয়ানমারে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার আঁচ বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে তারা। আগে থেকেও বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। এদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে চীনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে কথা হয়েছে-সেটা কী বিষয় নিয়ে। এমন প্রশ্নের জবাব জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন,
চীনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে যে বিষয়টি প্রথমে আসে সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে চীন একটা ভূমিকা নিতে পারে। এখানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়ে ১৩ লাখের মতো। এটা আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। এমনিতেই মহামারি করোনা ও যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য দ্রব্যর মূল্য বৃদ্ধিতে যে সংকটের তৈরি হয়েছে, সেটাতেই আমরা সংকটে আছি। তারপর এতোগুলো লোককে খাওয়ানো, চিকিৎসা সেবা দেয়া আমাদের জন্য বোঝা। এদের যে সাহায্যটা আসতো, সেটাও আগের থেকে অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিরাট বোঝা। যত তাড়াতাড়ি তাদের প্রত্যাবাসন করা যায়, মিয়ানমার যত তাড়াতাড়ি তাদের ফেরত নেয় তাদের নাগরিকদের, সে ব্যাপারে চীন একটা ভূমিকা রাখতে পারে। এগুলো নিয়ে কথা বলা হয়েছি।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, এখন যেটা আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ চলছে, এটার রেশ আমাদের সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত এসেছে। আমাদের সীমান্ত থেকেও গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। এটা একটা আতঙ্ক তো আছে। আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ না, যুদ্ধ তাদের অভ্যন্তরীণ, কিন্তু আমাদের সীমান্তে এ যুদ্ধের গোলাগুলির আওয়াজ চলে আসছে, তখন স্বাভাবিকভাবে ভয়ভীতি আমাদের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়টিতে তাদের হস্তক্ষেপ আশা করছি।
আমাদের দেশে চীন যে উন্নয়ন করছে, এগুলো বিশেষ করে বলেছি, আমাদের সব প্রকল্প, মেগাপ্রকল্প বেশিরভাগ করে ফেলেছি। একটা প্রকল্প অনেক আগেও শেষ হওয়ার কথা, সেটা চীনা বিআরটি প্রকল্প, এটা দ্রুত শেষ করার জন্য দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে। আমাদের কোনো প্রকল্পে এতো দেরি হয়নি। এ প্রকল্পে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এরইমধ্যে মিয়ানমারের ১৪ সেনাসদস্য বান্দরবানের বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের যে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সেটার কিছু কিছু বিষয়ের প্রতিক্রিয়া আমাদের এখানেও আসছে। নাইক্ষ্যংছড়ি, বালুখালির মতো এলাকায় তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে গোলাগুলি হয়। গোলা নিক্ষেপ করে। এসব বিষয়ের প্রতিক্রিয়া আমাদের এখানে চলে আসে। সীমান্তবর্তী দেশ তো, সেই হিসেবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে সহযোগিতা চেয়েছেন, সে বিষয়ে তাদের সাড়া কী ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইতিবাচক। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমরা চেষ্টা করব। আমরা চেষ্টা করছি। আপনি যখন এ বিষয়টি বললেন, ভবিষ্যতে চেষ্টা আরও জোরদার করব।
এদিকে আজ সকালে
বিদ্রোহীদের আক্রমণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনীর ১৪ সদস্য তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। বান্দরবানের তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি বিজিবির জনসংযোগ দফতর থেকে সময় সংবাদকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তুমব্রু এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের সিও মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
এছাড়াও ভোরে মিয়ানমারে সীমান্তবর্তী ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেল থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছিল। আজ আবার ভোর থেকে লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু তাই নয় গুলির শিষা ও রকেট লঞ্চার উড়ে এসে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এরইমধ্যে তাদের ছোড়া গুলিতে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।